পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্রিদেব সম্বন্ধে বিজ্ঞানশাস্ত্ৰ কি বলে RSS) বৈজ্ঞানিক বিচার করিয়া ত্রিদেবের কল্পনায় উপস্থিত হইয়াছিলেন। ইহাদিগের উৎপত্তি বেদগীত বিষ্ণু রুদ্রাদি হইতে। বৈদিক বিষ্ণু রুদ্রাদি বৈজ্ঞানিক সঙ্কল্প নহে, ইহার যথেষ্ট প্রমাণ বেদেই আছে। কিন্তু পাতৃত্ব হর্ভূত্ব স্রষ্টত্বের সূচনাও বেদে আছে। তবে অদ্বিতীয় দর্শনশাস্ত্ৰবিং ভারতীয় পণ্ডিতগণ কর্তৃক এই ত্রিদেবোপাসনা গৃহীত হইয়াছিল, জনসাধারণে উহা বদ্ধমূল, ইহাতে অবশ্য এমত বিবেচনা করা কীৰ্ত্তব্য যে, উহার সুদৃঢ় নৈসর্গিক ভিত্তি আছে। লোকবিশ্বাসের সেই গৃঢ় নৈসর্গিক ভিত্তি কি, তাহাই আমরা দেখাইলাম। . আমাদিগের দ্বিতীয় বক্তব্য এই যে, এই ত্রিদেবোপাসনার নৈসর্গিক ভিত্তি আছে বটে, কিন্তু আমরা এমত কিছু লিখি নাই এবং বিচারেও এমত কোন কথাই পাওয়া যায় না যে, তদ্দ্বারা এই ত্রিদেবের অস্তিত্ব বিজ্ঞানের দ্বারা প্ৰমাণীকৃত বলিয়া স্বীকার করা যায়। প্রমাণে দুইটি গুরুতর ছিদ্র লক্ষিত হয়। প্রথম এই যে, জগতের নিৰ্ম্মাণকৌশলে চৈতন্যযুক্ত নিৰ্ম্মাতার অস্তিত্ব প্রমাণ হইতেছে, এই কথা স্বীকার করাতেই ত্রিদেবের অস্তিত্ব সঙ্গত বলিয়া সংস্থাপিত হইয়াছে। কিন্তু প্ৰথম সূত্রটি ভ্ৰান্তিজনিত ; প্ৰাকৃতিক নির্বাচনের ফলকেই নিৰ্ম্মাণকৌশল বলিয়া আমাদিগের ভ্ৰম হয় ; সেই ভ্ৰান্ত জ্ঞানেই আমরা নিৰ্ম্মাতাকে সিদ্ধ করিয়াছি, নচেৎ নিৰ্ম্মাতার অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্ৰমাণ নাই । নিৰ্ম্মাতার অস্তিত্ব স্বীকার করিয়াই আমরা সংহারকত্তা, এবং পৃথক পৃথক স্রষ্টা পাতা পাইয়াছি। যদি নিৰ্ম্মাতার অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নাই, তবে ত্রিদেবের মধ্যে কাহারও অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্ৰমাণ নাই । দ্বিতীয় দোষ এই যে, সৃজন পালন সংহার, একই নিয়মাবলীর ফল। বিজ্ঞান ইহাই শিখাইতেছে যে, যে যে নিয়মের ফলে সৃজন, সেই সেই নিয়মের ফলে পালন, সেই সেই নিয়মের ফলে ধ্বংস। নিয়ম যেখানে এক, নিয়ন্তা সেখানে পৃথক সঙ্কল্প করা প্ৰামাণ্য নহে। আমরা কোথাও বলি নাই যে, তাহা প্ৰামাণ্য । আমরা কেবল বলিয়াছি যে, তাহা অপ্রামাণ্য বা অসঙ্গত নহে, সঙ্গত। যাহা প্ৰমাণবিরুদ্ধ নিতে বা যাহা কেবল সঙ্গত, তাহা সুতরাং প্রামাণিক, ইহা বলা যাইতে পারে না। আমাদিগের তৃতীয় বক্তব্য এই যে, ত্রিদেবের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা স্বীকার করিলেও, তাহাদিগকে সাকার বলিয়া স্বীকার করা যায় না । পুরাণেতিহাসে যে সকল আনুষঙ্গিক কথা আছে, তৎপোষকে কিছুমাত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তি পাওয়া যায় না। ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর প্রত্যেকেই কতকগুলি অদ্ভুত উপন্যাসের নায়ক। সেই সকল উপন্যাসের তিলমাত্র নৈসৰ্গিক ভিত্তি নাই। যিনি ব্ৰহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরকে বিশ্বাস করেন, তঁহাকে