পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদেশের কৃষক S86 কখন ভরসার মধ্যে বন্য অখাদ্য ফলমূল, কখন ভরসা “রিলিফ,” কখন ভিক্ষা, কখন ভরসা। কেবল জগদীশ্বর। অল্পসংখ্যক মহাত্মা ভিন্ন কোন জমীদারই এমন দুঃসময়ে প্ৰজার ভরসার স্থল নহে। মনে কর, সে বার সুবৎসর। পরাণ মণ্ডল কার্জ পাইয়া দিনপাত করিতে লাগিল । পরে ভাদ্রের কিস্তি আসিল। পরাণের কিছু নাই, দিতে পারিল না। পাইক, পিয়াদা, নগদী, হালশাহানা, কোটাল বা তদ্রুপ কোন নামধারী মহাত্মা তাগাদায় আসিলেন। হয় ত কিছু করিতে না পারিয়া, ভাল মানুষের মত ফিরিয়া গেলেন। নয় ত পরাণ কার্জ করিয়া টাকা দিল। নয় তা পরাণের দুবুদ্ধি ঘটিল—“সে পিয়াদার সঙ্গে বাচসা করিল। পিয়াদা ফিরিয়া গিয়া গোমস্তাকে বলিল, “পরাণ মণ্ডল আপনাকে শালা বলিয়াছে।” তখন পরাণকে ধরিতে তিন জন পিয়াদ ছুটিল। তাহারা পরাণকে মাটি ছাড়া করিয়া লইয়া আসিল । কাছারিতে আসিয়াই পরাণ কিছু সুসভ্য গালিগালাজ শুনিল-শরীরেও কিছু উত্তম মধ্যম ধারণ করিল। গোমস্ত তাহার। পাচ গুণ জরিমানা করিলেন। তাহার উপর পিয়াদার রোজ। পিয়াদাদিগের প্রতি হুকুম হইল, উহাকে বসাইয়া রাখিয়া আদায় কর । যদি পরাণের কেহ হিতৈষী থাকে, তবে টাকা দিয়া খালাস করিয়া আনিল । নচেৎ পরাণ এক দিন, দুই দিন, তিন দিন, পাচ দিন, সাত দিন কাছারিতে রহিল। হয় ত পরাণের মা কিম্বা ভাই থানায় গিয়া এজেহার করিল। সব ইনস্পেক্টর মহাশয় কয়েদ খালাসের জন্য কনষ্টেবল পাঠাইলেন। কনষ্টেবল সাহেব-দিন দুনিয়ার মালিককাছারিতে আসিয়া জাকিয়া বসিলেন। পরাণ র্তাহার কাছেই বসিয়া-একটু কঁাদা কাটা আরম্ভ করিল। কনষ্টেবল সাহেব একটু ধুমধাম করিতে লাগিলেন—কিন্তু “কয়েদ খালাসের” কোন কথা নাই। তিনিও জমীদারের বেতনভুক-বৎসরে দুই তিন বার পাৰ্ব্বণী পান, বড় উড়িবার বল নাই। সে দিনও সর্বসুখময় পরমপবিত্ৰমূৰ্ত্তি রৌপ্যচক্রের দর্শন পাইলেন। এই আশ্চৰ্য্য চক্র দৃষ্টিমাত্রেই মনুষের হৃদয়ে আনন্দ রসের সঞ্চার হয়—ভক্তি । শ্ৰীতির উদয় হয়। তিনি গোমস্তার প্রতি শ্ৰীত হইয়া থানায় গিয়া প্ৰকাশ করিলেন, “কেহ কয়েদ ছিল না। পরাণ মণ্ডল ফেরেকবাজ লোক-সে পুকুর-ধারে তালতলায় লুকাইয়াছিল—আমি ডাক দিবা মাত্র সেইখান হইতে আসিয়া আমাকে দেখা দিল।” 6भांक गभा निशा (१ाल ! প্ৰজা ধরিয়া লইয়া গিয়া, কাছারিতে আটক রাখা, মারপিট করা, জরিমানা করা, কেবল খাজানা বাকির জন্য হয়, এমত নহে। যে সে কারণে হয়। আজি গোপাল মণ্ডল