পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rbr বিবিধ প্ৰবন্ধ

  • রাম। এই যে আমার সম্মুখেই রহিয়াছেন।

বাসস্তী। মৰ্ম্মভেদী প্ৰলাপ বাক্যে আমি একে প্ৰিয়সখীর দুঃখে জ্বলিতেছি, তাহাতে আবার এমনতর এ হতভাগিনীকে কেন জ্বালাইতেছেন ? রাম বলিলেন, “সখি, প্ৰলাপ কই? বিবৃহকালে বৈবাহিক মঙ্গলসূত্ৰযুক্ত যে হাত আমি ধরিয়াছিলাম-আর যে হাতের অমৃতশীতল স্বেচ্ছালব্ধ সুখস্পর্শে চিনিতে পারিতেছি, এ ত সেই হাত ! সেই তুহিনীসদৃশ, বর্ষাশীকরতুল্য শীতল, কোমল লবলীবৃক্ষের নবান্ধুরতুল্য হস্তই আমি পাইয়াছি।” • এই বলিয়া রাম'র্তাহার ললাটস্থ অদৃশ্য সীতা-হস্ত গ্ৰহণ করিলেন। সীতা ইতিপূর্বেই রামের আনন্দমোহ দেখিয়া অপসৃত হইবেন বিবেচনা করিয়াছিলেন ; কিন্তু সেই চিরসম্ভাবসৌম্যশীতল স্বামিস্পর্শে তিনিও মুগ্ধ হইলেন ; অতি যত্নে সেই রামললাটস্থিত হস্তকে ধরিয়া রাখিলেও সে হস্ত কঁাপিতে লাগিল, ঘামিতে লাগিল, এবং জড়বৎ হইয়া অবশ হইয়া আসিতে লাগিল। যখন রাম, সীতার হস্তের চিরপরিচিত অমৃতশীতল সুখস্পর্শের কথা বলিলেন, সীতা মনে মনে বলিলেন, “আৰ্য্যপুত্র, আজিও তুমি সেই আৰ্য্যপুত্ৰই আছ!” শেষে যখন রাম সীতারু কর গ্ৰহণ করিলেন, তখন সীতা দেখিলেন, স্পর্শমোহে প্ৰমাদ ঘটিল। কিন্তু রাম সে হাত ধরিয়া রাখিতে পারিলেন না ; আনন্দে তাহার ইন্দ্ৰিয়সকল অবশ হইয়া আসিয়াছিল, তিনি বাসন্তীকে বলিলেন, “সখি, তুমি একবার ধরা।” সীতা সেই অবকাশে হাত ছাড়াইয়া লইলেন ; লইয়া, স্পর্শ সুখজনিত স্বেদরোমাঞ্চকম্পিত্যকলেবর হইয়া পবনকম্পিত নবজািলকণাসিক্ত ক্ষুটকোরক কদম্বের ন্যায় দাড়াইয়া রহিলেন। মনে করিলেন, “কি লজ্জা, তমসা দেখিয়া কি মনে করিতেছেন। ভাবিতেছেন, এই ইহাকে ত্যাগ করিয়াছেন, আবার ইহার প্রতি এই অনুরাগ।” রাম ক্রমে জানিতে পারিলেন যে, কই, কোথা সীতা—সীতা ত নাই। তখন রামের শোকপ্ৰবাহ দ্বিগুণ ছুটিল। রোদন করিয়া, ক্ৰমে শান্ত হইয়া বাসন্তীকে বলিলেন, “আর কতক্ষণ তোমাকে কঁাদাইব ? আমি এখন যাই।” শুনিয়া সীতা উদ্বেগের সহিত তমসাকে অবলম্বন করিয়া বলিতে লাগিলেন, “ভগবাতি তমসে । আৰ্য্যপুত্র যে চলিলেন?” তমসা বলিলেন, “চল, আমরাও যাই।” সীতা বলিলেন, “ভগবাতি, ক্ষমা কর! আমি ক্ষণকাল এই দুল্লভ জনকে দেখিয়া লই।” কিন্তু বলিতে বলিতে এক বজাতুল্য কঠিন কথা সীতার কানে গেল। রাম বাসন্তীর নিকট বলিতেছেন, “অশ্বমেধের জন্য আমার এক সহধৰ্ম্মিণী আছে—” সহধৰ্ম্মিণী। সীতা কম্পিত্যকলেবর হইয়া মনে মনে বলিলেন, “আৰ্য্যপুত্র!