পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 W বিবিধ প্ৰবন্ধ যাহা হউক, মনুস্যজীবন ভালবাসার অত্যাচারে পরিপূর্ণ। চিরকাল মনুষ্য অত্যাচারপীড়িত। প্রথমাবস্থায় বাহুবলের অত্যাচার ; অসভ্য জাতিদিগের মধ্যে যেই বলিষ্ঠ, সেই পরপীড়ন করে। কালে এই অত্যাচার, রাজার অত্যাচার এবং অর্থের অত্যাচারে পরিণত হয় ; কোন সমাজে কখন একেবারে লুপ্ত হয় নাই। দ্বিতীয়াবস্থায় ধৰ্ম্মের অত্যাচার ; তৃতীয়াবস্থায় সামাজিক অত্যাচার ; এবং সকল অবস্থাতেই ভালবাসার অত্যাচার। এই চতুব্বিধ পীড়নের মধ্যে, প্রণয়ের পীড়ন কাহারও পীড়ন অপেক্ষা হীনবল বা অল্পানিষ্টিকারী নহে । বরং ইহা বলা যাইতে পারে যে, রাজা, সমাজ বা ধৰ্ম্মবেত্তা, কেহই প্রণয়ীর অপেক্ষা বলবান নহেন বা কেহ তেমন সদা সৰ্ব্বক্ষণ সকল কাজে আসিয়াই হস্তক্ষেপণ করেন না-সুতরাং প্রণয়ের পীড়ন যে সৰ্ব্বাপেক্ষা অনিষ্টকারী, ইহা বলা যাইতে পারে । আর অন্য অত্যাচারকারীকে নিবারণ করা যায়, অন্য অত্যাচারের সীমা আছে । কেন না, অন্যান্য অত্যাচারকারীর বিরোধী হওয়া যায়। প্ৰজা, প্ৰজাপীড়ক রাজাকে রাজ্যচুতি করে ; কখনও মস্তকচু্যত করে। লোকপীড়ক সমাজকে পরিত্যাগ করা যায়। কিন্তু ধৰ্ম্মের পীড়নে এবং সুেহের পীড়নে নিষ্কৃতি নাই- কেন না, ইহাদিগের বিরোধী হইতে প্ৰবৃত্তিই জন্মে না । হরিদাস বাবাজি পটার বাটি দেখিলে কখন কখন লাল ফেলিয়া থাকেন বটে, কিন্তু কখন গোস্বামীর সম্মুখে মাংসভোজনের ঔচিত্য বিচার করিতে ইচ্ছা করেন না-কেন না, জানেন যে, ইহলোকে যতই কষ্ট পান না কেন, বা বাজি পরলোকে গোলোক প্রাপ্ত হইবেন । মনুষ্য যে সকল অত্যাচারের অধীন, সে সকলের ভিত্তিমূল মনুষ্যের প্রয়োজনে । জড়পদার্থকে আয়ত্ত না করিতে পারিলে মনুস্যজীবন নির্বাহ হয় না, এ জন্য বাহুবলের প্ৰয়োজন । এবং সেই জন্যই বাহুবলের অত্যাচারও আছে । বাহুবলের ফল বৃদ্ধি করিবার জন্য সমাজের প্রয়োজন ; এবণ সমাজের অত্যাচারও সঙ্গে সঙ্গে । যেমন পরস্পরে সমাজবন্ধনে বদ্ধ না হইলে, মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য সুসম্পন্ন হয় না, তেমনি পরস্পরে আন্তরিক বন্ধনে বদ্ধ না হইলে, মনুস্যজীবনের সুনিৰ্ব্বাহ হয় না । অতএব সমাজের যেরূপ প্ৰয়োজন, প্ৰণয়েরও তদ্রুপ বা ততোধিক প্রয়োজন । এবং বাহুবলের বা সমাজের অত্যাচার আছে বলিয়াই যেমন বাহুবল বা সমাজ মনুত্যুের ত্যাজ্য বা অনাদরণীয় হইতে পারে না, প্ৰণয়ের অত্যাচার আছে বলিয়াই তাহাও ত্যাজ্য বা অনাদরণীয় হইতে পারে। না । অপিচ। যেমন বাহুবল বা সমাজবলকে অত্যাচারী দেখিয়া তাহাকে পরিত্যক্ত বা অনাদৃত না করিয়া, মনুষ্য ধৰ্ম্মের দ্বারা তাহার শমতার চেষ্টা পাইয়াছে, প্ৰণয়ের অত্যাচারও সেইরূপ ধৰ্ম্মের দ্বারা শমিত করিতে যত্ন করা কীৰ্ত্তবা। ধৰ্ম্মেরও অত্যাচার আছে বটে, এবং ধৰ্ম্মের অত্যাচার শমতার জন্য যদি আরও কোন শক্তি প্ৰযুক্ত হয়, তাহারও অত্যাচার