পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ძა(სტ বিবিধ প্ৰবন্ধ উৎকর্ষ লাভ করে নাই বলিয়াই মনুষ্যস্নেহ অদ্যাপি পশুবৎ । পশুবৎ, কেন না, পশুদিগেরও বৎসস্নেহ, দাম্পত্যপ্ৰণয় এবং বাৎসল্য, দাম্পত্য, ব্যতীত পরস্পর অন্যবিধ প্ৰণয় আছে । প্রথমটি মানুষের অপেক্ষা অল্প পরিমাণে নহে । স্নেহের যথার্থ স্বরূপই অস্বার্থপরতা। যে মাতা পুত্রের সুখের কামনায়, পুত্রমুখ দর্শন কামনা পরিত্যাগ করিলেন, তিনিই যথার্থ স্নেহবতী । যে প্রণয়ী, প্ৰণয়ের পাত্রের মঙ্গলার্থ আপনার প্রণয়জনিত সুখভোগও ত্যাগ করিতে পারিল, সেই প্ৰণয়ী । যত দিন না। সাধারণ মানুষ্যের প্ৰেম, এইরূপ বিশুদ্ধতা প্ৰাপ্ত হইবে, তত দিন মানুষের ভালবাসা হইতে স্বার্থপরতা কলঙ্ক ঘুচিবে না। এবং স্নেহের যথার্থ স্ফৰ্ত্তি ঘটিবে না। যেখানে ভালবাসা এই রােপ বিশুদ্ধি প্ৰাপ্ত হইবে বা যাহার হৃদয়ে হইয়াছে, সেইখানে ভালবাসার দ্বারায় ভালবাসার অত্যাচার নিবারণ হইতে পারে, এবং হইয়াও থাকে। এরূপ বিশুদ্ধ প্রণয়বিশিষ্ট মনুষ্য দুর্লভ নহে। কিন্তু এ প্রবন্ধে তঁাহাদিগের কথা বলিতেছি না-ৰ্তাহারা অত্যাচারীও নহেন । অন্যত্র, ধৰ্ম্মের শাসনে প্ৰণয় শাসিত করাই ভালবাসার অত্যাচার নিবারণের একমাত্র উপায়। সে ধৰ্ম্ম কি ? ধৰ্ম্মের যিনি যে ব্যাখ্যা করুন না, ধৰ্ম্ম এক । দুইটি মাত্র মূলসূত্রে সমস্ত মনুষ্যের নাতিশাস্ত্ৰ কথিত হইতে পারে । তাহার মধ্যে একটি আত্মসম্বন্ধীয়, দ্বিতীয়টি পরসম্বন্ধীয়। যাহা আত্মসম্বন্ধীয়, তাহাকে আত্মসংস্কার নীতির মূল বলা যাইতে পারে,—এবং আত্মচিত্তের স্ফৰ্ত্তি এবং নিৰ্ম্মলতা রক্ষাই তাহার উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়টি, পর সম্বন্ধীয় বলিয়াই তাহাকে যথার্থ ধৰ্ম্মনীতির মূল বলা যাইতে পারে। “পরের অনিষ্ট করিও না ; সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও ।” এই মহতী উক্তি জগতীয় তাবদ্ধৰ্ম্মশান্ত্রের একমাত্র মূল, এবং একমাত্র পরিণাম । অন্য যে কোন নৈতিক উক্তি বল না কেন, তাহার আদি ও চরম ইহাতেই বিলীন হইবে। আত্মসংস্কারনীতির সকল তত্ত্বের সহিত, এই মহানীতিতত্ত্বের ঐক্য আছে। এবং পরিহিতনীতি এবং আত্মসংস্কারনীতি একই তত্ত্বের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা মাত্র। পরহিতরতি এবং পরের অহিতে বিরতি, ইহাই সমগ্ৰ নীতিশাস্ত্রের সার উপদেশ । অতএব এই ধৰ্ম্মনীতির মূল সূত্রাবলম্বন করিলেই ভালবাসার অত্যাচার নিবারণ হইবে। যখন স্নেহশালী ব্যক্তি স্নেহের পাত্রের কোন কাৰ্য্যে হস্তক্ষেপ করিতে উদ্যত সুয়েন, তখন র্তাহার মনে দৃঢ় সঙ্কল্প করা উচিত যে, আমি কেবল আপনি সুখের জন্য হস্তক্ষেপ করিব না ; আপনার ভাবিয়া, যাহার প্রতি স্নেহ করি, তাহার কোন প্রকার অনিষ্ট করিব না । আমার যতটুকু কষ্ট সহ্যু করিতে হয়, করিব ; তথাপি তাহার কোন প্রকার অহিতে তাহাকে প্ৰবৃত্ত করিব না।