পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ ܠܢ ܘܠ কিন্তু চাৰ্ব্বাগদি কোন কোন আৰ্য্য দার্শনিক ইহাকে প্ৰমাণ বলিয়াই স্বীকার করেন না । ইউরোপীয়েরাও ইহাকে স্বতন্ত্র প্রমাণ বলিয়া স্বীকার করেন না । দেখা যাইতেছে, সকলের কথায় বিশ্বাস অকৰ্ত্তব্য । যদি একজন বিখ্যাত মিথ্যাবাদী আসিয়া বলে যে, সে জলে অগ্নি জ্বলিতে দেখিয়া আসিয়াছে, তবে এ কথা কেহই বিশ্বাস করিবে না । তাঙ্গার উপদেশে প্ৰমাক্তানের উৎপত্তি নাই। ব্যক্তিবিশেষের উপদেশই প্রমাণ বলিয়া গ্ৰাহা । তবে সেই জ্ঞানলাভের পূর্বে আদৌ মীমাংসা আবশ্যক যে, কে বিশ্বাসযোগ্য, কে নহে। কোন প্ৰমাণের উপর নির্ভর করিয়া এ মীমাংসা করিব ? কোন প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া, মম্বাদির কথা আগুবাক্য বলিয়া গ্ৰহণ করিব, এবং রামু শ্যামুর কথা অগ্ৰাহা করিব ? দেখা যাইতেছে যে, অনুমানের দ্বারা ইহা সিদ্ধ করিতে হইবে। মনুর সঙ্গে পল্লীর পাদরি সাহেবের মতভেদ । তুমি চিরকাল শুনিয়া আসিয়াছ যে, মনু অভ্রান্ত ঋষি, এবং পাদরি সাহেব স্বার্থপর সামান্য মনুস্য ; এ জন্য তুমি অনুমান করিলে যে, মনুর কথা গ্ৰাহ, পাদরির কথা অগ্ৰাহা । মনুর ন্যায় অভ্ৰান্ত ঋষি গোমাংসভোজন নিযেধ করিয়াছেন বলিয়া তুমি অনুমান করিলে গোমাংস অভক্ষ্য। অতএব শব্দকে একটি স্বতন্ত্র প্রমাণ না বলিয়া, অনুমানের অন্তর্গত বল না কেন ? শুধু তাহাই নিতে । যে ব্যক্তির কতকগুলি উপদেশ গ্ৰাহ্য কর, তাহারই আর কতকগুলি অগ্ৰাহা করিয়া থাক । মাধ্যাকর্ষণ সম্বন্ধে নিউটনের যে মত, তাহা তুমি শিরোধাৰ্য্য কর, কিন্তু আলোক সম্বন্ধে তাহার যে মত, তাহা পরিত্যাগ করিয়া তুমি ক্ষুদ্রতর বুদ্ধিজীবী ইয়াঙ ও ফ্রেনেলের মত গ্ৰহণ কর, ইহার কারণ কি ? ইহার কারণ সন্ধান করিলে, তলে অনুমিতিকেই পাওয়া যাইবে । অনুমানের দ্বারা তুমি জানিয়াছ যে, মাধ্যাকর্ষণ সম্বন্ধে নিউটনের যে মত, তাহা সত্য, আলোক সম্বন্ধে তাহার যে মত, তাহা অসত্য । যদি শব্দ একটি পৃথক প্রমাণ হইত, তবে তঁহার সকল মতই তুমি গ্রাহ্যু করিতে । ভারতবর্ষে তাহাই ঘটিয়া থাকে। ভারতবর্ষে যাহার মত গ্ৰাহ বলিয়া স্থির হয়, তাহার সকল মতই গ্ৰাহা । ইহার কারণ, শব্দ একটি স্বতন্ত্র প্রমাণ বলিয়া গণ্য-আপ্তবাক্য মাত্র গ্রাহ, ইত আৰ্য্য দর্শনশাস্ত্রের আজ্ঞা । এইরূপ বিশেষ বিচার ব্যতীত ঋষি ও পণ্ডিতদিগের মতমাত্ৰই গ্ৰহণ করা, ভারতবর্ষের অবনতির একটি যে কারণ, ইহা বলা বাহুল্য। অতএব দার্শনিকদিগের এই একটি ক্ষুদ্র ভ্ৰান্তিতে সামান্য কুফল ফলে নাই ! প্রত্যক্ষ, অনুমান এবং শব্দ ভিন্ন নৈয়ায়িকেরা উপমিতিকেও একটি স্বতন্ত্র প্রমাণ বিবেচনা করেন। বিচার করিয়া দেখিলে সিদ্ধ হইবে যে, উপমিতি, অনুমিতির প্রকারভেদ মাত্র, এবং সেই জন্য সাংখ্যাদি দর্শনে উপমিতি স্বতন্ত্র প্রমাণ বলিয়া গণ্য হয় নাই। অতএব