পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাংখ্যদর্শন 소 어fT5安 উপক্ৰমণিকা ! দেশীয় প্রাচীন দর্শন সকলের মধ্যে বঙ্গদেশে ন্যায়ের প্রাধান্য । দেশীয় পণ্ডিতের সচরাচর সাংখ্যের প্রতি তাদৃশ মনোযোগ করেন না। কিন্তু ভারতবর্ষে সাংখ্য যে কীৰ্ত্তি করিয়াছে, তাহ অন্য দর্শন দূরে থাকুক, অন্য কোন শাস্ত্রের দ্বারা হইয়াছে কি না, সন্দেহ। বহু পাল হইল, এই দর্শনের প্রকাশ হয়। কিন্তু অদ্যপি হিন্দুসমাজের হৃদয়মধ্যে ইহার নানা মূৰ্ত্তি সিরাজ কপিতেছে । যিনি হিন্দুদিগের পুরাবৃত্ন অধ্যয়ন করিতে চাচোন, সাংখ্যদর্শন না বুঝিলে তঁহার সম্যক জ্ঞান জন্মিবে না ; কেন না, হিন্দুসমাজের পূর্বক{লীয় গতি অনেক দূর সাংখ্য প্রদশিত পথে হহুঁ, যা ছিল । সিনি বৰ্ত্তমান হিন্দুসমাজের চরিএ বুঝিতে চাহেন, তিনি সাংখ্য অধ্যয়ন করুন। :া’ চরিত্রের মূল সাংখ্যে অনেক দেখিতে পাইবেন । সংসার যে দুঃখময়, দুঃখ নিবারণমাত্র আমাদিগের পুরুষাৰ্থ, এ কথা। যেমন হিন্দুজাতির হাড়ে হাড়ে প্ৰবেশ করিয়াছে, এমন বোধ হয়, পৃথিবীর আর কোন জাতির মধ্যে হয় नारें । তাহার বীজ সাংখ্যদর্শনে । তিনি বন্ধন ভারতবর্ষে যে পরিমাণে ধৈরাগ্য বহুকাল হইতে প্ৰবল, তেমন আর কোন দেশেই নাহে । সেই বৈরাগ্য প্ৰাধিল্যের ফল। বৰ্ত্তমান হিন্দুচরিত্র । যে কাৰ্য্যপরতন্ত্রতার অভাব আমাদিগের প্রধান দুলক্ষণ প্ৰলিয়া বিদেশীয়রা নির্দেশ করেন, তাহা সেই বৈরাগ্যের সাধারণত মাত্র । যে অদৃষ্টবাদিত্ব আমাদিগের দ্বিতীয় প্রধান লক্ষণ, তাহা সাংখ্যা জাত বৈরাগ্যের ভিন্ন মূৰ্ত্তি মাত্র । এই বৈরাগ্যসাধারণত এবং অদৃষ্টবাদিত্বের কৃপাতেই ভারত ধর্মীয়দিগের অসীম মাহুবল সত্ত্বেও আৰ্য্যভূমি মুসলমান-পদানত হইয়াছিল । সেই জন্য অদ্যপি ভারতবর্ষ পরাধীন । সেই জন্যই বহুকাল হইতে এ দেশে সমাজোন্নতি মন্দ হইয়া শোধে অবরুদ্ধ হইয়াছিল । আবার সাংখ্যের প্রকৃতি পুরুষ লইয়া তন্ত্রের সৃষ্টি । সেই তান্ত্রিককাণ্ডে দেশ ব্যাপ্ত হইয়াছে। সেই তন্ত্রের কৃপায় বিক্রমপুরে বসিয়া নিষ্ঠ ব্ৰাহ্মণ ঠাকুর অপরিমিত মদিরা উদারস্থ করিয়া, ধৰ্ম্মাচরণ করিলাম বলিয়া পরম পরিতোষ লাভ করিতেছেন । সেই তন্ত্রের প্রভাবে প্রায় শত যোজন দূরে, ভারতবর্ষের পশ্চিমাংশে কাণফেঁাড়া যোগী উলঙ্গ হইয়া কদৰ্য্য উৎসব করিতেছে । সেই তন্ত্রের প্রসাদে আমরা দুর্গোৎসব করিয়া এই বাঙ্গালা দেশের ছয় কোটি লোক জীবন সার্থক করিতেছি । যখন গ্রামে গ্রামে, নগরে মাঠে জঙ্গলে