পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰাচীন এবং নবীনা আমাদিগের সমাজসংস্কারকেরা নূতন কীৰ্ত্তি স্থাপনে যাদৃশ ব্যগ্র, সমাজের গতি পৰ্য্যবেক্ষণায় তাদৃশ মনোযোগী নহেন। “এই হইলে ভাল হয়, অতএব এই কর।” ইহাই তাহাদিগের উক্তি, কিন্তু কি করিতে কি হইতেছে, তাহ কেহ দেখেন না । বাঙ্গালিরা যে ইংরেজি শিখে, ইহাতে সকলেরই উৎসাহ । কিন্তু ইহার ফল কি, তাহার সমালোচনা কেবল আজি কালি হইতেছে। এক শ্রেণীর লোক বলেন, ইহার ফল মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দ্বারকানাথ মিত্র প্রভৃতি ; দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক বলেন, দুই একটি ফল সুপক এবং সুমধুর বটে, কিন্তু অধিকাংশ তিক্ত ও বিষময় ; উদাহরণ-মাতালের দল এবং সাধারণ বাঙ্গালি লেখকের পাল। আবার দিন কত ধুম পড়িল, স্ত্রীলোকদিগের অবস্থার সংস্কার কর, স্ত্রীশিক্ষা দাও, বিধবাবিবাহ দাও, স্ত্রীলোককে গৃহপিঞ্জর হইতে বাহির করিয়া উড়াইয়া দাও, বহুবিবাহ নিবারণ করা ; এবং অন্যান্য প্রকারে পাচী। রামী মাধীকে বিলাতি মেম করিয়া তুল। ইহা করিতে পারিলে যে ভাল, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই ; কিন্তু পাচী যদি কখন বিলাতি মেম হইতে পারে, তবে আমাদিগের শালতরুও এক দিন ওকবৃক্ষে পরিণত হইবে, এমন ভরসা করা যাইতে পারে। যে রীতিগুলির চলন আপাততঃ অসম্ভব, সেগুলি চলিত হইল না ; স্ত্রীশিক্ষা সম্ভব, এ জন্য তাহা এক প্রকার প্রচলিত হইয়া উঠিতেছে। পুস্তক হইতে এক্ষণে বাঙ্গালি স্ত্রীগণ যে শিক্ষা প্ৰাপ্ত হয়, তাহা অতি সামান্য ; পরিবর্তনশীল সমাজে অবস্থিতি জন্য অর্থাৎ শিক্ষিত এবং ইংরেজের অনুকরণকারী পিতা ভ্ৰাতা স্বামী প্রভৃতির সংসর্গে থাকায় তাহারা যে শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়, তাহা প্রবলতর। এই দ্বিবিধ শিক্ষার ফল কিরূপ দাড়াইতেছে ? বাঙ্গালি যুবকের চরিত্রে যেরূপ পরিবর্তন দেখা যাইতেছে, বাঙ্গালি যুবতীগণের চরিত্রে সেরাপ লক্ষণ কিছু দেখা যাইতেছে কি না ? যদি দেখা যাইতেছে, সেগুলি ভাল, না মন্দ ? তাহার উৎসাহ দান বিধেয়, না। তাহার দমন আবশ্যক ? এ সকল প্রশ্ন সাধারণ লেখকদিগকে আলোচনা করিতে আমরা প্ৰায় দেখিতে পাই না, অথচ ইহার অপেক্ষা গুরুতর সামাজিক তত্ত্বও আর নাই। তাই বলিতেছিলাম যে, আমাদিগের সমাজসংস্কারকেরা নূতন কীৰ্ত্তি স্থাপনে যাদৃশ ব্যগ্ৰ, সমাজের বর্তমান গতির আলোচনায় তাদৃশ মনোযোগী নহেন। বিষয়টি অতি গুরুতর। সমাজে স্ত্রীজাতির যে বল, তাহ বাণিত করিবার প্রয়োজন নাই। মাতা বাল্যকালের শিক্ষাদাত্রী, স্ত্রী বয়ঃপ্ৰাপ্তের মন্ত্রী, ইত্যাদি প্রাচীন কথা পুনরুক্তি করিবার প্রয়োজন নাই। সকলেই জানেন, স্ত্রীলোকের সম্মতি এবং সাহায্য ব্যতীত সংসারের কোন গুরুতর। কাৰ্য্য সম্পন্ন হয় না । গহনা গড়ান ও গোরু কেনা হইতে