পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

!ა ძს ििद e বাস্তবিক সর্বত্রই, রামায়ণের রামচন্দ্ৰ হইতে ভবভূতির রামচন্দ্র অধিকতর কোমলপ্ৰকৃতি । ইহার এক কারণ এই, উভয় চরিত্র, গ্ৰন্থ রচনার সময়োপযোগী। রামায়ণ প্ৰাচীন গ্ৰন্থ । কেহ কেহ বলেন যে, উত্তরকাণ্ড বাল্মীকিপ্ৰণীত নহে। তাহা হউক বা না হউক, ইহা যে প্ৰাচীন রচনা, তদ্বিষয়ে সংশয় নাই। তখন আৰ্য্যজাতি বীরজাতি ছিলেন । আৰ্য্য রাজগণ বীরস্বভাবসম্পন্ন ছিলেন । রামায়ণের রাম মহাবীর, তাহার চরিত্র গাম্ভীৰ্য্য এবং ধৈৰ্য্যপরিপূর্ণ। ভবভূতি যৎকালে কবি-তখন ভারতবৰ্ষয়েরা আর সে চরিত্রের নহেন। ভোগাকাজক্ষা, অলসাদির দ্বারা, তঁহাদের চরিত্র কোমল প্ৰকৃত হইয়াছিল । ভবভূতির রামচন্দ্ৰও সেইরূপ। তঁহার চরিত্রে বীরলক্ষণ কিছুই নাই। গাভীৰ্য্য এবং ধৈৰ্য্যের বিশেষ অভাব। র্তাহার অধীরতা দেখিয়া কখন কখন কাপুরুষ বলিয়া ঘূণা হয়। সীতার অপবাদ শুনিয়া ভবভূতির রামচন্দ্ৰ যে প্রকার বালিকাসূলভ বিলাপ করিলেন, তাহাই ইহার উদাহরণ স্থল। তিনি শুনিয়াই মূচ্ছিত হইলেন। তাহার পর দুৰ্ম্মখের কাছে অনেক কঁাদাকাটা করিলেন । অনেক সুদীর্ঘ বক্তৃতা করিলেন। তন্মধ্যে অনেক সকরুণ কথা আছে বটে, কিন্তু এত বাগাড়ম্বরে করুণরসের একটু বিষ্ম তয় ! এত বালিকাব মত কঁদিলে রামচন্দ্রের প্রতি কাপুরুষ বলিয়া ঘূণা হয়। উদাহরণ :-

  • হা দেবি দেবযজনসম্ভাবে । হা স্বজন্মানুগ্রহপবিত্ৰিত বসুন্ধারে । হা নিমিজনক বংশনন্দিনি !

হা পাবকবশিষ্ঠারুন্ধতী প্ৰশস্তশালশালিনি । হা রামময়জীবিতে । হা মতোরণ্যবাস প্ৰিয়সখি ! হা প্রিয়ন্তোকবাদিনি! কথমেবংবিধায়াস্তবায়মীদৃশ: পরিণাম: !” এইরূপ স্থলে রামায়ণের রামচন্দ্ৰ কি করিয়াছেন ? কত কাদিয়াছেন ? কিছুই না । মহাবীর প্রকৃত শ্ৰীরাম সভামধ্যে সীতাপবাদের কথা শুনিলেন। শুনিয়া সভাসদগণকে কেবল এই কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন, সকলে কি এইরূপ বলে ?” সকলে তাহাই বলিল। তখন ধীরপ্ৰকৃতি রাজা আর কাহাকে কিছু না বলিয়া সভা হইতে উঠিয়া গেলেন । মূৰ্ছাও গেলেন না,-মাথাও কুটিলেন না-ভূমেও গড়াগড়ি দিলেন না। পরে নিভৃত হইয়া, কাতরতাশূন্য ভাষায় ভ্ৰাতৃবর্গকে ডাকাইলেন। ভ্রাতৃগণ আসিলে, পর্বতবৎ অবিচলিত থাকিয়া, তাহাদিগকে, আপন অভিপ্ৰায় জানাইলেন। বলিলেন, “আমি সীতাকে পবিত্ৰ জানি-সেই জন্যই গ্ৰহণ করিয়াছিলাম-কিন্তু এক্ষণে এই লোকাপবাদ ! অতএব আমি সীতাকে ত্যাগ করিব।” স্থির প্রতিজ্ঞ হইয়া, লক্ষ্মণের প্রতি রাজাজ্ঞা প্রচার

  • “হা দেবি যজ্ঞভূমিসম্ভবে। হা জন্মগ্রহণপবিত্রিতল সুন্ধারে । হা নিমি এবং জনকবংশের আনন্দদাত্রি। হা অগ্নি বশিষ্ঠদেব এবং অরুন্ধতীসদৃশ প্ৰশংসনীয় চরিতে ! হাঃ রামময়জীবিতে ! হা মহাবনবাস প্ৰিয়সহ চরি৷ ! হা মধুরভাষিণি ! হা মিতবাদিনি । এইরূপ হইয়াও শেষে তোমার অদৃষ্টে এই ঘটিল।”-নৃসিংহবাবুর অনুবাদ ।