পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

obrV বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ বাবাজি । দেখ, বাপু ! বৈষ্ণব নাম গ্ৰহণ করিবার আগে বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম কি, বোঝা । তোমার কণ্ঠীতে বৈষ্ণব হয় না, কুঁড়োজালিতেও নয়, নিরামিষেও নয়, পঞ্চসংস্কারেও নয়, দেড় কাহিন বৈষ্ণবীতেও নয়। জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব কে বল দেখি ? আমি । নারদ, এধরুব, প্ৰহলাদ । বাবাজি । প্ৰহলাদই সর্বশ্রেষ্ঠ । প্ৰহলাদ বৈষ্ণবধৰ্ম্মের কি ব্যাখ্যা করিয়াছেন, শুন, সৰ্ব্বত্র দৈত্যাঃ সমতামুপেত সমত্ব মারাধনমচ্যুতস্য। অর্থাৎ “হে দৈত্যগণ ! তোমরা সর্বত্ৰ সমদৰ্শী হও । সমত্ব, অর্থাৎ সকলকে আত্মবৎ জ্ঞান করাই বিষ্ণুর যথার্থ উপাসনা।” কণ্ঠা, কুঁড়োজালি, কি দেখাস্ রে মুর্থ ! এই সে সমদৰ্শিতা, ইহাই সেই অহিংসা-ধৰ্ম্মের যথার্থ তাৎপৰ্য্য । সমদর্শী হইলে আর হিংসা থাকে না । এই সমদৰ্শিতা থাকিলেই মনুষ্য, বিষ্ণুনাম জানুক না জানুক, যথার্থ বৈষ্ণব হইল ! সে খি_ষ্টিয়ান, কি মুসলমান মনুষ্যমাত্ৰৰ্কে আপনার মত দেখিতে শিখিয়াছে, সে যিশুরই পূজা করুক আর পীর প্যাগম্বরেরই পূজা করুক, সে-ই পরম বৈষ্ণব। আর তোমার কণ্ঠী কুঁড়োজালির নিরামিষের দিলে, যাহারা তাহা শিখে নাই, তাহারা কেহই বৈষ্ণব, নহে । আমি । মাছ পাটা খেয়ে কি তবে বৈষ্ণব হওয়া যায় ? বাবাজি। মূখ! তোকে বুঝাইলাম কি ? আমি । তবে আমাকেও একখানা পাতা দিতে বলুন। তখন পাতা, এবং কিঞ্চিৎ অন্ন এবং মহাপ্ৰসাদ পাইয়া আমিও ভোজনে বসিলাম । পাকের কার্য্যটা অতি পরিপার্টিরূপ হইয়াছিল। ছাগমাংস ভোজনে আমার ক্ষুধা বৃদ্ধির লক্ষণ দেখিয়া বাবাজি বলিলেন, “বাপু হে! কল্পনা করিয়াছি, পরামর্শ দিয়া আগামী বৎসর কছিমদী সেখকে দিয়া দুর্গোৎসব করাইব ।” আমি । ফল কি ? কাবাজি । ছাগমাংস কিছু গুরুপাক । মুরগী বড় লঘুপাক, অতএব বৈষ্ণবের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । আমি। মুসলমানের বাড়ী খাইতে আছে ? বাবাজি । এ কান দিয়ে শুনিস্, ও কান দিয়ে ভুলিস্ ? যখন সর্বত্র সমান জ্ঞান, সকলকে আত্মবৎ জ্ঞানই বৈষ্ণবধৰ্ম্ম, তখন হিন্দু ও মুসলমান, এ ছোট জাতি, ও বড় জাতি, এরূপ ভেদ-জ্ঞান করিতে নাই । যে এরূপ ভেদ-জ্ঞান করে, সে বৈষ্ণব, নহে।