পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

dò বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ সর্বজ্ঞতা সম্বন্ধে মিল বলেন যে, ঈশ্বর সর্বজ্ঞ কি না, তদ্বিষয়ে সন্দেহ। যে প্রণালী অবলম্বন করিয়া মনুমৃেত্যুর কৃত কৌশলের বিচার করা যায়, সে প্ৰণালী অবলম্বন করিয়া ঈশ্বরকৃত কৌশল সকলের সমালোচনা করিলে অনেক দোষ বাহির হয়। এই মনুষ্যদেহের নিৰ্ম্মাণে কত কৌশল, কত শক্তি ব্যয়িত হইয়াছে, কত যত্নে তাহ রক্ষিত হইয়া থাকে। কিন্তু যাহাতে এত কৌশল, এত শক্তিব্যয়, এত যত্ন, তাহা ক্ষণভঙ্গুর-কখন অধিক কাল থাকে না । যিনি এত কৌশল করিয়া ক্ষণভঙ্গুরতা বারণ করিতে পারেন নাই, তিনি সকল কৌশল জানেন না-সর্বজ্ঞ নহেন । দেখ, জীবশরীর কোন স্থানে ছিন্ন হইলে, তাহা পুনঃসংযুক্ত হইবার কৌশল আছে ; উহাতে বেদনা হয়, পূয হয়, এবং সেই ব্যাধির ফলে পুনঃসংযোগ ঘটে। কিন্তু সেই ব্যাধি পীড়াদায়ক । যাহার প্রণীত কৌশল, উপকারার্থ প্ৰণীত হইয়াও পীড়াদায়ক, তাহার কৌশলে অসম্পূর্ণতা আছে। যাহার কৌশলে অসম্পূর্ণতা আছে, তাহাকে কখন সৰ্ব্বজ্ঞ বলা যাইতে পারে না । ইহাও মিল স্বীকার করেন যে, এমন্তও হইতে পারে যে, এই অসম্পূর্ণতা শক্তির অভাবের ফল-অসৰ্ব্বজ্ঞতার ফল নহে। অতএব ঈশ্বর সর্বজ্ঞা হইলেও হইতে পারেন । যদি ইহাই বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর সর্বজ্ঞ, কিন্তু সৰ্ব্বশক্তিমান নহেন, তবে এই এক প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, কে ঈশ্বরের শক্তির প্রতিবন্ধকতা করে ? মনুস্যাদি যে সর্বশক্তিমান ܗܝܕ.-ܚ-ܡܕܡ* s নহে, তাহার কারণ, তাহাদিগের শক্তির প্রতিবন্ধক আছে। তুমি যে হিমালয় পৰ্ব্বত উৎপাটন করিয়া সাগর-পারে নিক্ষেপ করিতে পার না।--তাহার কারণ, মাধ্যাকর্ষণ তোমার শক্তির প্ৰতিবন্ধকতা করিতেছে। শক্তির প্রতিবন্ধক না থাকিলে, সকলেই সৰ্ব্বশক্তিমান হইত। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নহেন, এই কথায় প্ৰতিপন্ন হইতেছে যে, তঁাহার শক্তির প্রতিবন্ধক কেহ বা কিছু আছে। সেই প্ৰতিবন্ধক কি ? কোন বিপ্নের জন্য সর্বজ্ঞ তাহার অভিপ্রেতি কৌশল নির্দোষ করিতে পারেন নাই ? এই সম্বন্ধে দুইটি উত্তর হইতে পারে। কেহ বলিতে পারেন যে, দেখ, ঈশ্বর নিৰ্ম্মাতা মাত্র ; তিনি যে স্রষ্টা, এমত প্রমাণ তুমি কিছুই পাও নাই। তুমি তাহার। নিৰ্ম্মাণপ্ৰণালী দেখিয়াই তঁাহার অস্তিত্ব সিদ্ধ করিতেছি ; কিন্তু নিৰ্ম্মাণপ্ৰণালী হইতে কেবল নিৰ্ম্মাতাই সিদ্ধ হইতে পারেন, স্রষ্টা সিদ্ধ হইতে পারেন না । যাটের নিৰ্ম্মাণ দেখিয়া তুমি কুম্ভকারের অস্তিত্ব সিদ্ধ করিতে পার ; কিন্তু কুম্ভকারকে মৃত্তিকার সৃষ্টিকারক বলিয়া তুমি সিদ্ধ করিতে পার না। অতএব এমন হইতে পারে যে, ঈশ্বর স্রষ্টা নহেন, কেবল নিৰ্ম্মাতা । ইহার অর্থ এই, যে সামগ্রীকে গঠন দিয়া তিনি বর্তমানাবস্থাপন্ন করিয়াছেন, সে সামগ্ৰী পূর্ব হইতে ছিল—ঈশ্বরের সৃষ্ট নহে। ঘট দেখিয়া কেবল ইহাই সিদ্ধ হয় যে, কোন কুম্ভকার মৃত্তিকা লইয়া ঘট নিৰ্ম্মাণ করিয়াছে। মৃত্তিকা তাহার পূর্ব হইতে ছিল,