পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্রিদেব সম্বন্ধে বিজ্ঞানশাস্ত্ৰ কি বলে პა ი (No নিয়মের ফলে ধ্বংস। নিয়ম যেখানে এক, নিয়ন্তা সেখানে পৃথক সঙ্কল্প করা প্রামাণ্য নহে । আমরা কোথাও বলি নাই যে, তাহা প্ৰামাণ্য । আমরা কেবল বলিয়াছি যে, তাহা অপ্রামাণ্য বা অসঙ্গত নহে, সঙ্গত ; যাহা প্রমাণবিরুদ্ধ নহে বা মাহা কেবল সঙ্গত, তাহা সুতরাং প্ৰামাণিক, ইহা বলা যাইতে পারে না । আমাদিগের তৃতীয় বক্তব্য এই যে, ত্রিদেবের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা স্বীকার করিলেও, র্তাহাদিগকে সাকার বলিয়া স্বীকার করা যায় না। পুরাণেতিহাসে যে সকল আনুষঙ্গিক কথা আছে, তৎপোষকে কিছুমাত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তি পাওয়া যায় না। ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, প্ৰত্যেকেই কতকগুলি অদ্ভুত উপন্যাসের নায়ক । সেই সকল উপন্যাসের তিলমাত্র নৈসৰ্গিক ভিত্তি নাই । যিনি ব্ৰহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরকে বিশ্বাস করেন, তঁাহাকে নিৰ্ব্বোধ বলিতে পারি না ; কিন্তু তাই বলিয়া পুরাণেতিহাসে বিশ্বাসের কোন কারণ আমরা নির্দেশ করি নাই । চতুর্থ, ত্রিদেবের অস্তিত্বের কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নাই, ইহা যথার্থ ; কিন্তু ইত্যা স্বীকার করিতে হইবে যে, মহাবিজ্ঞানকুশলী ইউরোপীয় জাতির অবলম্বিত খিষ্টধৰ্ম্মাপেক্ষা, হিন্দুদিগের এই ত্রিদেবোপাসনা বিজ্ঞানীসঙ্গত এবং নৈসগিক । ত্রিদেবোপাসনা বিজ্ঞানমূলক না হউক, বিজ্ঞানবিরুদ্ধ নহে। কিন্তু খি ষ্টীয় সর্বশক্তিমান, সৰ্ব্বজ্ঞ, এবং দয়াময় ঈশ্বরে বিশ্বাস যে বিজ্ঞানবিরুদ্ধ, তাহা উপরিকথিত মিল-কৃত বিচারে সপ্রমাণ হইয়াছে। হিন্দুদিগের মত কৰ্ম্মফল মানিলে বা হিন্দুদিগের মায়াবাদে তাহা বিজ্ঞানসম্মত হয়। বিজ্ঞানে ইহা পদে পদে প্ৰমাণীকৃত হইতেছে যে, এই জগৎ ব্যাপিয়া সৰ্ব্বত্র, সৰ্ব্বকাৰ্য্যে, এক অনন্ত, অচিন্তনীয়, অজ্ঞেয় শক্তি আছে—ইহা সকলের কারণ, বহির্জগতের অন্তরাত্মাস্বরূপ । সেই মহাবলের অস্তিত্ব অস্বীকার করা দূরে থাকুক, আমরা তদুদেশে ভক্তিভাবে কোটি কোটি কোটি প্ৰণাম করি ।