পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঙ্গীত [১২৭৯ সালের বঙ্গদর্শনে সঙ্গীতপিসয়ক তিনটি প্ৰবন্ধ প্ৰকাশিত চায় । তাহার কিয়দংশ (৬/ জগদীশনাথ রায়ের রচিত। অবশিষ্ট অংশ আমার বচন।। যতটুকু আমার রচনা, তাহাই আমি পুনমুদ্রিত করিলাম। ইহা প্ৰবন্ধের ভগ্নাংশ হইলে ও পাঠকের বুঝিবার ক% হইবে •} } ] সঙ্গীত কাহাকে বলে ? সকলেই জানেন যে, সুরবিশিষ্ট শব্দই সঙ্গীত । কিন্তু সুর কি ? কোন বস্তুতে অপর বস্তুর আঘাত হাইলে, শব্দ জন্মে ; এবং আহত পদার্থের পরমাণুমধ্যে কম্পন জন্মে। সেই কম্পনে, তাহার চারি পার্শ্বস্থ বায়ুও কম্পিত হয় । ( যেমন সরোবর মধ্যে জলের উপরি ইষ্টকখণ্ড নিক্ষিপ্ত করিলে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গমালা সমুদ্ভুত হইয়া চারি দিকে মণ্ডলাকারে ধাবিত হয়, সেইরূপ কম্পিত বায়ুর তরঙ্গ চারি দিকে ধাবিত হইতে থাকে । সেই সকল তরঙ্গ কৰ্ণমধ্যে প্ৰাধিষ্ট হয়। কর্ণমধ্যে একখানি সূক্ষ্ম চৰ্ম্ম আছে। ঐ সকল বায়বীয় তরঙ্গপরম্পরা সেই চৰ্ম্মোপরি প্রহিত হয় ; পরে তৎসংলগ্ন অস্থি প্রভৃতি দ্বারা শ্রাবণ স্নায়ুতে নীত হইয়া মস্তিষ্কমধ্যে প্রবিষ্ট হয়। তাহাতে আমরা শব্দানুভব করি । অতএব বায়ুর প্রকম্প শব্দজ্ঞানের মুখ্য কারণ। বৈজ্ঞানিকেরা স্থির করিয়াছেন যে, যে শব্দে প্ৰতি সেকেণ্ডে ৪৮,০ ০ ১ বার বাসুর প্রকম্প হয়, তাহা আমরা শুনিতে পাই, তাহার অধিক হইলে শুনিতে পাই না । মস্যার সাবতি অবধারিত করিয়াছেন যে, প্ৰতি সেকেণ্ডে ১৪ বারের নূ্যনসংখ্যক প্রকল্প যে শব্দে, সে শব্দ আমরা শুনিতে পাই না। এই প্রকম্পের সমান মাত্ৰা সুরের কারণ । দুইটি প্রকম্পের মধ্যে সে সময় গত হয়, তাত যদি সকল বারে সমান থাকে, তাহা হইলেই সুর জন্মে। গীতে তাল যেরূপ, মাত্রার সমতা মাত্র —শব্দপ্রকম্পে সেইরূপ থাকিলেই সুর জন্মে। যে শব্দে সেই সমতা নাই, তাহা সুররূপে পরিণত হয় না । সে শব্দ “বেসুর” অর্থাৎ গণ্ডগোল মাত্র । তালই সঙ্গীতের সার। এই সুরের একতা বা বহুত্বই সঙ্গীত । বাহিত্যু নিসর্গতত্ত্বে সঙ্গীত এইরূপ, কিন্তু তাহাতে মানসিক সুখ জন্মে কেন ? তাহা বলি । সংসারে কিছুই সম্পূর্ণরূপে উৎকৃষ্ট হয় না। সকলেরই উৎকর্ষের কোন অংশে অভাব বা কোন দোষ আছে । কিন্তু নির্দোষ উৎকর্ষ আমরা মনে কল্পনা করিয়া লইতে পারি-এবং এক বার মনোমধ্যে তাহার প্রতিমা স্থাপিত করিতে পারিলে, তাহার প্ৰতিমূৰ্ত্তির সৃজন করতে পারি। যথা, সংসারে কখন নির্দোষ সুন্দর মনুষ্য পাওয়া যায় না ; যত মনুষ্য দেখি, সকলেরই কোন না কোন দোষ আছে, কিন্তু সে সকল দোষ ত্যাগ