পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sb বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ হইবে । চাষা চিরকাল ধার করিয়া খায়, চিরকাল দেড়ী সুন্দ দেয়। ইহাতে রাজার নিঃস্ব হইবার সম্ভাবনা, চাষা কোন ছার ! হয় তা জমীদার নিজেই মহাজন । গ্রামের মধ্যে র্তাহার পানের গোলা ও গোলাবাড়ী আছে। পরাণ সেইখান হইতে ধান লইয়া আসিল । এরূপ জুমীদারের ব্যবসায় মন্দ নহে। স্বয়ং প্ৰজার অর্থাপহরণ করিয়া, তাহাকে নিঃস্ব করিয়া, পরিশেমে কার্জ দিয়া, তাহার কাছে দেড়ী সুন্দ ভোগ করেন। এমত অবস্থায় যত শীঘ্ৰ প্ৰজার অর্থ অপহৃত করিতে পারেন, ততই তাহার লাভ । সকল বৎসর সমান নহে। কোন বৎসর উত্তম ফসল জন্মে, কোন বৎসর জন্মে না । অতিবৃষ্টি আছে, অনাবৃষ্টি আছে, অকালবৃষ্টি আছে, বন্যা আছে, পঙ্গপালের দৌরাত্ম্য আছে, অন্য কীটের দৌরাত্ম্যও আছে। যদি ফসলের সুলক্ষণ দেখে, তবেই মহাজন কর্জ দেয় ; নিচেৎ দেয় না । কেন না, মহাজন বিলক্ষণ জানে যে, ফসল না হইলে কৃষক ঋণ পরিশোধ করিতে পরিবে না । তখন কৃষক নিরুপায় । অন্নাভাবে সপরিবারো প্ৰাণে মারা যায় । কখন ভরসার মধ্যে বন্য অখাদ্য ফলমূল, কখন ভরসা “রিলিফ,” কখন ভিক্ষা, কখন ভরসা। কেবল জগদীশ্বর । আল্পসংখ্যক মহাত্মা ভিন্ন কোন জমীদারই এমন দুঃসময়ে প্রজার ভরসার স্থল নহে। মনে কর, সে বার সুবৎসর। পরাণ মণ্ডল কার্জ পাইয়া দিনপাত করিতে व्लाठिन ।' পরে ভান্দ্রের কিস্তি আসিল । পরাণের কিছু নাই, দিতে পারিল না। পাইক, পিয়াদা, নগদী, হালশাহানা, কোটাল বা তদ্রুপ কোন নামধারী মহাত্মা তাগাদায় আসিলেন । হয় ত কিছু করিতে না পারিয়া, ভাল মানুষের মত ফিরিয়া গেলেন : নয় ত পরাণ কার্জ করিয়া টাকা দিল। নয় তা পরাণের দুবুদ্ধি ঘটিল-সে পিয়াদার সঙ্গে বাচসা করিল। পিয়াদা ফিরিয়া গিয়া গোমস্তাকে বলিল, “পরাণ মণ্ডল আপনাকে শালা বলিয়াছে।” তখন পরাণকে ধরিতে তিন জন পিয়াদ ছুটিল। তাহারা পরাণকে মাটি ছাড়া করিয়া লইয়া আসিল । কাছারিতে আসিয়াই পরাণ কিছু সুসভ্য গালিগালাজ শুনিল—শরীরেও কিছু উত্তম মধ্যম ধারণ করিল। গোমস্ত তাহার পাঁচ গুণ জরিমানা করিলেন। তাহার উপর পিয়াদার রোজ । পিয়াদাদিগের প্রতি হুকুম হইল, উহাকে বসাইয়া রাখিয়া আদায় কর । যদি পরাণের কেহ হিতৈষী থাকে, তবে টাকা দিয়া খালাস করিয়া আনিল। নচেৎ পরাণ এক দিন, দুই দিন, তিন দিন, পাঁচ দিন, সাত দিন কাছারিতে রহিল। হয় ত পরাণের মা কিম্বা ভাই থানায় গিয়া এজেহার করিল । সৰ্ব্ব ইনস্পেক্টর মহাশয় কয়েদ খালাসের জন্য কনষ্টেবল পাঠাইলেন। কনষ্টেবল সাহেব-দিন দুনিয়ার মালিককাছারিতে আসিয়া জাকিয়া বসিলেন। পরাণ র্তাহার কাছেই বসিয়া-একটু কঁাদা কাটা আরম্ভ করিল। কন্‌ষ্টেবল সাহেব একটু ধুমধাম করিতে লাগিলেন—কিন্তু “কয়েদ