পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

0. বিবিধ প্ৰবন্ধ এইরূপ মৰ্ম্মমধ্যে রুদ্ধ সন্তাপে দগ্ধ হইয়া রাম, পরিক্ষীণ শরীরে রাজকৰ্ম্মানুষ্ঠান করিতেন। রাজ কৰ্ম্মে ব্যাপৃত থাকিলে, সে কষ্টের তাদৃশ বাহা প্ৰকাশ পায় না ; কিন্তু আজ পঞ্চবটীতে আসিয়া রামের ধৈৰ্য্যাবলম্বনের সে উপায়ও নাই । এ আবার সেই জনস্থান ; পদে পদে সীতাসহবাসের চিহ্নপরিপূর্ণ। এই জনস্থানে কত কাল, কত সুখে, সীতার সহিত বাস করিয়াছিলেন, তাহা পদে পদে মনে পড়িতেছে। রামের সেই দ্বাদশ বৎসরের রুদ্ধ শোকপ্ৰবাহ ছুটিয়াছে-সে। প্ৰবাহবিলে, এই গোদাবরীত্ৰোতঃস্থলিত শিলচয়ের ন্যায় রামের হৃদয়পাষাণ আজি কোথায় যাইবে, কে বলিতে পারে ? জনস্থানবাহিনী করুণাদ্রাবিত নদীগুলিন দেখিল যে, আজি বড় বিপদ। তখন মুরল। কলকল করিয়া গোদাবরীকে বলিতে চলিল, “ভগবতি : সাবধান থাকিও—আজি রামের বড় বিপদ। দেখিও, রাম যদি মূৰ্ছা যান, তবে তোমার জলকণাপূর্ণ শীতল তরঙ্গের বাতাসে মৃদু মৃদু। তাহার মুৰ্চা ভঙ্গ করিও।” রঘুকুলদেবতা ভাগীরথী এই শোকতাপনাতপসন্তাপ হইতে রামকে রক্ষা করিবার জন্য এক সর্বসন্তাপসংহারিণী ছায়াকে জনস্থানে পাঠাইলেন । সেই ছায়ার স্নিগ্ধতায় অদ্যাপি ভারতবর্ষ মুগ্ধ রহিয়াছে। সেই ছায়া হইতে কবি এই তৃতীয়াঙ্কের নাম রাখিয়াছিলেন “ছায়া।”—এই ছায়া, সেই বহুকালবিস্মৃত, পাতালপ্রবিষ্টা, শীর্ণদেহমাত্ৰবিশিষ্টা হতভাগিনী রামমোহিনী সীতার ছায়া । সীতা লবকুশকে প্রসব করিলে পর, ভাগীরথী এবং পৃথিবী বালক দুইটিকে বাল্মীকির আশ্রমে রাখিয়া সীতাকে পাতালে লইয়া গিয়া রাখিয়াছিলেন। অদ্য কুশলবের জন্মতিথি-সীতাকে স্বহস্তাবচিত কুসুমাঞ্জলি দিয়া পতিকুলাদিপুরুষ সূৰ্য্যদেবের পূজা করিতে ভাগীরথী এই জনস্থানে পাঠাইলেন। এবং আপন দৈবশক্তিপ্রভাবে রঘুকুলবধুকে আদর্শনীযা করিলেন । ছায়ারূপিণী সীতা সকলকে দেখিতে পাইতেছিলেন | সীতাকে কেহ দেখিতে পাইতেছিল না । সীতা তখন জানেন না যে, রাম জনস্থানে আসিয়াছেন । সীতাও আসিয়া জনস্থানে প্রবেশ করিলেন। তখন র্তাহার আকৃতি কিরূপ ? তাহার মুখ “পরিপাণ্ডুদুর্বল কপোলসুন্দর'-কবরী বিলোল-শারদাতপসন্তপ্ত কেতকীকুসুমান্তৰ্গত পত্রের ন্যায়, বন্ধনবিচু্যত কিসলয়ের মত সীতা সেই অরণ্যে প্ৰবেশ করিলেন । জনস্থানে তাহার গভীর প্ৰেম ! পূর্বসুখের স্থান দেখিয়া বিস্মৃতি জন্মিল—আবার সেই দিন মনে পড়িল। যখন সীতা রামসহবাসে এই বনে থাকিতেন, তখন জনস্থান বনদেবতা বাসন্তীর সহিত র্তাহার। সখিত্ব হইয়াছিল। তখন সীতা একটি করিশাবককে স্বহস্তে শল্পকীর পল্লবাগ্রেভাগ ভোজন কাবাইয়া পুত্রের ন্যায় প্রতিপালন করিয়াছিলেন। এখন সেই করিশাবকও ছিল। এইমাত্র সে বধুসঙ্গে জলপানে গিয়াছে। এক মত্ত যুথপতি আসিয়া অকস্মাৎ তৎপ্রতি