পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ठेखझbब्रिड s আক্রমণ করিল। সীতা তাহা দেখেন নাই। কিন্তু অন্যত্রস্থিত বাসন্তী দেখিতে পাইয়াছিলেন। বাসন্তী তখন উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিলেন, “সর্বনাশ হইল, সীতার পালিত করিকারভকে মারিয়া ফেলিল ।” রাব সীতার কৰ্ণে গেল। সেই জনস্থান, সেই পঞ্চবটী । সেই বাসন্তী ! সেই কারিকরভ ! সীতাঁর ভ্ৰান্তি জন্মিল। পুত্রীকৃত হস্তিশাবকের বিপদে বিহবলচিত্ত হইয়া তিনি ডাকিলেন, “আৰ্য্যপুত্র! আমার পুত্রকে বাঁচাও !” কি ভ্ৰম ! আৰ্যপুত্র ? কোথায় আৰ্য্যপুত্ৰ ? আজি বার বৎসর সে নাম নাই! আমনি সীতা মুচ্ছিতা হইয়া পড়িলেন। তমসা তঁহাকে আশ্বস্তা করিতে লাগিলেন। এ দিকে রামচন্দ্ৰ লোপামুদ্রার আহবানানুসারে অগস্ত্যাশ্রমে যাইতেছিলেন। পঞ্চবটী বিচরণ করিবার মানসে সেইখানে বিমান রাখিতে বলিলেন। রামের কণ্ঠস্বর মুচ্ছিতা সীতার কানো গেল । অমনি সীতার মুৰ্দ্ধাভঙ্গ হইল-সীতা ভয়ে, আহলাদে, উঠিয়া বসিলেন। বলিলেন, “এ কি এ ? জলভরা মেঘের স্তনিতগম্ভীর মহাশব্দের মত কে কথা কহিল ? আমার কর্ণবিবর যে ভরিয়া গেল ! আজি কে আমা হেন মন্দভাগিনীকে সহসা আহিলাদিত করিল ?” দেখিয়া তমসার চক্ষু জলে ভরিয়া গেল। তমসা বলিলেন, “কেন বাছা, একটা অপরিস্ফুট শব্দ শুনিয়া মেঘের ডাকে ময়ুরীর মত চমকিয়া উঠিলি ?” সীতা বলিলেন, “কি বলিলে ভগবাতি ? অপরিস্ফুট ? আমি যে স্বরেই চিনেছি, আমার সেই আৰ্য্যপুত্ৰ কথা কহিতেছেন।” তমসা যখন দেখিলেন, আর লুকান বৃথা—বলিলেন, “শুনিয়াছি, মহারাজ রামচন্দ্ৰ কোন শূদ্র তাপসের দণ্ড জন্য এই জনস্থানে আসিয়াছেন।” শুনিয়া সীতা কি বলিলেন ? বার বৎসরের পর স্বামী নিকটে, নয়নের পুত্তলীর অধিক প্রিয়, হৃদয়ের শোণিতেরও অধিক প্রিয়, সেই স্বামী আজি বার বৎসরের পর নিকটে, শুনিয়া সীতা কি বলিলেন ? শুনিয়া সীতা কিছুই আহলাদ প্ৰকাশ করিলেন না।--“কই স্বামী-কোথায় সে প্ৰাণাধিক ?” বলিয়া দেখিবার জন্য তমসাকে উৎপীড়িতা করিলেন না, কেবল বলিলেন “দিঠঠিয়া অপরিহীনারা অধৰ্ম্মে কৃথু সো রাআ”-“সৌভাগাক্ৰমে সে রাজার রাজধৰ্ম্ম পালনে ত্রুটি হইতেছে না ।” যে কোন ভাষায়, যে কোন নাটকে যাহা কিছু আছে, এতদংশ সৌন্দৰ্য্যে তাহার তুল্য, সন্দেহ নাই। “দিঠঠিআ অপরিহীনারা অধম্মো কৃথু সো রাআ ।” এইরূপ বাক্য কেবল সেক্ষপীয়রেই পাওয়া যায়। রাম আসিয়াছেন শুনিয়া সীতা আহিলাদের কথা কিছুই বলিলেন না, কেবল বলিলেন, “সৌভাগ্যক্রমে সে রাজার রাজধৰ্ম্ম পালনের ক্রটি হইতেছে না।” কিন্তু দূর হইতে রামের সেই বিরহ ক্লিষ্ট প্রভাতচন্দ্ৰমণ্ডলবৎ আকার দেখিয়া, “সখি, আমায় ধর” বলিয়া তমসাকে ধরিয়া বসিয়া পড়িলেন । এ দিকে রাম পঞ্চবটী দেখিতে দেখিতে, সীতাবিরহপ্রদীপ্তানলে পুড়িতে পুড়িতে, “সীতে ! সীতে!”