পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NS8 বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ “মৃ” “স্র” “অস” প্রভৃতি যেন এইরূপে পাওয়া গেল, কিন্তু তাহাতে বিবিধ ভাব ব্যক্ত হইল কৈ ? শুধু “মৃ” বলিলে কি প্রকারে “মারিলাম” “মারিল” “মারিব।” “মারিয়াছি” “মারামারি” “মরণ” “মার”-এত প্ৰকার কথা ব্যক্ত হয় ? অতএব প্রয়োজনমতে মৃ ধাতুর সঙ্গে অন্য প্রকার শব্দের যোগ আবশ্যক হইল। সেই সংযোগের কাজকে ভাষার গঠন বলা যাইতে পারে। সেই সংযোগের কাজ সর্বত্র একরূপ হয় নাই ; এ জন্য ভাষার গঠন ভিন্ন ভিন্ন প্রকার আছে। কি প্রকারে সেই সকল গঠন বৰ্ত্তমান অবস্থায় পরিণত হইল, তাহার আলোচনায় আমাদিগের প্রয়োজন নাই। এখন পৃথিবীর ভাষাসকলের যে প্রকারের গঠন দেখা যায়, তাহাই সংক্ষেপে বিবৃত করা যাইতেছে। একজাতীয় ভাষায়, ধাতুর সঙ্গে যোগমাত্রের দ্বারা বাক্যের গঠন হয় ; কোন ধাতুর কোন প্রকার রূপান্তর হয় না । এ সকল ভাষায় বিভক্তি নাই, ইহাদিগকে “সংযোগের অসাপেক্ষা” (Isolating) ভাষা বলা যায়। চৈনিক, শ্যামদেশীয়, আনামদেশীয় বা ব্ৰহ্মদেশীয় ভাষা এইরূপ। দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাষাতেও বিভক্তি নাই, কিন্তু উপসৰ্গ প্ৰত্যয়াদি ধাতু দ্বারা রূপান্তর হয়। ইহার ধাতুতে ধাতুতে বা ধাতু ও সর্বনামে একপ্রকার সংযোগ হয় । এই সকল ভাষাকে সংযোগসাপেক্ষ (compounding) ভাষা বলে । দক্ষিণের তামিল প্রভৃতি ভাষা, তাতার ভাষা, আমেরিকার আদিমজাতীয় ভাষা। এই জাতীয়। তৃতীয় শ্রেণীর ভাষাতেই প্রকৃষ্টরূপে বিভক্তি আছে, সংযোগকালে ধাতুর ও সর্বনামেম রূপান্তর ঘটে । ইহাদিগকে বিভক্তিসম্পন্ন ভাষা (infecting) বলে। পৃথিবীর যত শ্রেষ্ঠ ভাষা, সকলই এই শ্রেণীর অন্তৰ্গত।* আরবী, ইহুদী, গ্রীক, লাটিন, ইংরেজী, ফরাশি, সংস্কৃত, বাঙ্গালা, হিন্দি, ফরাসী প্রভৃতি এই শ্রেণীর অন্তর্গত। দেখা গিয়াছে যে, এই তৃতীয় শ্রেণীর ভাষাগুলি ধাতু এবং বিভক্তিচিহ্ন লইয়া গঠিত। ধাতুর পর বিভক্তি ও প্রত্যয়বিশেষের আদেশে শব্দ ও ক্রিয়া নিম্পন্ন হয়। তাহা ছাড়া ভাষায় আর যাহা আছে, তাহাকে সাধারণতঃ সৰ্ব্বনাম বলা যাইতে পারে। সৰ্ব্বনামগুলি যে অবস্থাত্ৰষ্ট ধাতু, ইহাও বিবেচনা করিবার কারণ আছে। কিন্তু তাহা হৌক বা না হৌক, ধাতু, বিভক্তিচিহ্ন ও সর্বনাম লইয়া ভাষা। যদি কোন দুইটি ভাষায় দেখা যায় যে, ভাষার মুলীভূত ধাতু, বিভক্তি ও সর্বনাম একই, কেবল দেশকালভেদে কিছু রূপান্তর প্রাপ্ত হইয়াছে, তবে অবশ্য অনুমান করিতে হইবে যে, ঐ দুইটি ভাষা

  • এই শ্রেণীবিভাগ অগস্ত শ্লেচবু নামক জৰ্ম্মানু লেখককৃত। মক্ষ মুলবু প্ৰভৃতি ভাষার যেরূপ শ্ৰেণীভাগ করেন, তাহা আর এক প্রকার । তঁাহারা তৃতীয় শ্রেণীকে দুইটি স্বতন্ত্র শ্রেণীতে পরিণত করেন-শেমীয় ও আৰ্য্য। কিন্তু শে মীয় ও আৰ্য্য যখন উভয়েই তৃতীয় শ্রেণীর লক্ষণাক্রোন্ত, তখন

তাহাদিগকে স্বতন্ত্র শ্রেণী বলিয়া দাড় করান, কিছু বৈজ্ঞানিক-নীতি-বিরুদ্ধ।