পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WNOV বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ লইয়া পৌণ্ডবৰ্দ্ধন কোথায় ছিল, তাহা নিরূপণ করিবার চেষ্টা পাইয়াছেন। তিনি কিছু ইতস্ততঃ করিয়া আধুনিক পাবনাকে পৌণ্ড বৰ্দ্ধন বলিয়া স্থির করিয়াছেন। পাবনা না হইয়া বাঙ্গালার প্রাচীন রাজধানী মালদহ জেলার অন্তর্গত ধ্বংসপ্ৰাপ্ত নগরী পাণ্ডুয়া বলিলে পৌণ্ডবৰ্দ্ধনের প্রকৃত সংস্থান ঘটিত । তার পর দশকুমারচরিতে লেখা আছে, “অনুজায় বিষাণবৰ্ম্মণে দণ্ডচক্ৰং চ পুণ্ডাভিযোগায় বিরোচেয়ং ” অর্থাৎ পুণ্ড দেশ আক্রমণের জন্য কনিষ্ঠ ভ্ৰাতা বিষাণবৰ্ম্মাকে দণ্ড চক্র অর্থাৎ সৈন্য’দি দিতে ইচ্ছা করিয়াছি ॥* দশকুমারচরিত আধুনিক সংস্কৃত গ্ৰন্থ। উপরি লিখিত উক্তি কোন মৈথিল রাজার উক্তি, অতএব দশকুমার যখন প্রণীত হয়, তখনও পুণ্ডেরা মিথিলার নিকটবাসী । তাতএব দেখা যাইতেছে যে, ব্ৰাহ্মণ, ইতিহাস, স্মৃতি, এ সকলের সময় হইতে অর্থাৎ অতি পূর্বকাল হইতে দশকুমারচরিত ও হিয়েন্থ সাঙের সময় পৰ্য্যন্ত পুণ্ড নামে প্রবল জাতি বাঙ্গালার পশ্চিমাংশে বাস করিত । এক্ষণে বাঙ্গালায় বা বাঙ্গালার নিকট বা ভারতবর্ষের কোন প্রদেশে পুণ্ড নামে কোন জাতি নাই ! এই পুণ্ড জাতি। তবে কোথায় গেল ? সংস্কৃত শব্দে “ণ্ড” থাকিলে, বাঙ্গালার প্রচলিত ভাষায় ড-কার, ড্র-কার হইয়া যায় । আর ণ-কার লুপ্ত হইয়া পুৰ্ব্ববৰ্ত্তী হ’লবৰ্ণে চন্দ্ৰবিন্দুরূপে পরিণত হয়। যথা— ভাণ্ডের স্থলে ভার, যাণ্ডের স্থলে ষাড়, শুণ্ডের স্থলে শুড় । আর সংস্কৃত হইতে অপভ্ৰংশপ্ৰাপ্ত হই বাঙ্গালাদিতে পরিণত হইতে গেলে শব্দের রি-কারাদির সচরাচর লোপ হয়, যথা-তাম্র স্থলে তামা, আম্র স্থলে আমি ইত্যাদি । অতএব পুণ্ড শব্দ লৌকিক ভাষায় চলিত তইলে প্ৰথমে রেফ লুপ্ত করিয়া পুণ্ড শব্দে পরিণত হইবে । তার পর যেমন ভাণ্ড স্থলে ভঁাড় হয়, শুণ্ড স্থলে শুড়ি হয়, তেমনি পুণ্ড স্থলে পুড়ি বা পুড়ো হইবে । পুড়ো বাঙ্গালায় একটি ংখ্যায় প্ৰধান জাতি । আমরা পূর্বে যাহা উদ্ধৃত করিয়াছি, তাহাতে দেখা গিয়াছে যে, ঐতরেয় ব্ৰাহ্মণে ও মনুতে পুণ্ডেরা অনাৰ্য্যজাতির সঙ্গে গণিত হইয়াছে । অতএব পুড়ো আর একটি অনাৰ্য্যবংশোদ্ভূত বাঙ্গালী জাতি । শব্দের অপভ্ৰংশ একপ্রকার হয় না । প্রাচীন ভাষার কোন শব্দ ভাষান্তরে অপভ্ৰষ্ট হইয়া প্ৰবেশ করিলে দুই তিন রূপ ধারণ করে । এক সংস্কৃত “স্থান’ শব্দ বাঙ্গালী ভাষায় কোথাও থান, কোথাও ঠাই । ‘চন্দ্র’ শব্দ কখন চন্দর, কখন চাদ । যেমন চন্দ্ৰ শব্দ বাঙ্গালীর উচ্চাচরণে চন্দর হয়, ভদ্র শব্দ ভাদর হয়, তন্ত্র শব্দ তন্তর হয়, তেমনি পুণ্ডল শব্দ স্থানবিশেষে 3 দশকুমারচরিত, তৃতীয় উজ্জ্বাস