পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9)ý927 বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ অনাৰ্য্যের ন্যায়। তাহারা কৃষ্ণকায়, খর্বাকৃত, শূকর পালে এবং শূকর খায়। সুতরাং তাহাদিগের অনাৰ্য্যত্বে কোন সংশয় নাই। মনু, মহাভারতান্দির পুলিন্দ জাতি বর্তমান পলিদিগের পূর্বপুরুষ, এমন অনুমান কত দূর সঙ্গত, তাহা আমি এক্ষণে বলিতে পারিলাম মা । কোন আৰ্য্যবংশীয় জাতি যে শূকর পালন করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিবে, ইহা সম্ভব নহে। কেন না, শূকর আর্য্যশাস্ত্রানুসারে অতি অপবিত্র জন্তু ; বাঙ্গালাজয়কারী আৰ্য্যেরা ঐ সকল ব্যবসায় যে অনাৰ্য্যদিগের হাতে রাখিবেন, ইহাই সম্ভব। বিশেষ, শূকর বা শূকর মাংক্স আৰ্য্যদিগের কোন কাজে লাগে না । যদি এইরূপে শূকরপালক জাতি দিগকে অনাৰ্য্য বলিয়া স্থির করা যায়, তাহা হইলে দক্ষিণবাঙ্গালার কাওরারাও অনাৰ্য্য বলিয়া বোধ হয় । কাওরাদিগের জাতীয় আকারও অনাৰ্য্যদিগের ন্যায় । কাওরারা কোন অনাৰ্য্যজাতিসদ্ভুত, তাহা নিরূপণ করা যায় না। কিন্তু কতকগুলি অনাৰ্য্য জাতির সঙ্গে ইহাদিগের নামের সাদৃশ্য আছে। যথা—কোড়োয়া, খাড়োয়া, খাড়িয়া, কৌর ইত্যাদি। কিরাত শব্দ প্ৰাকৃততে কিরাও হইবে । কিরাও শব্দের অপভ্রংশে কাওরাও হওয়া অসম্ভব নহে। বাঙ্গালার উত্তরে কিরাতেরা কিরাতি বা কিরান্তি নামে অদ্যাপি বর্তমান আছে । পাশ্চাত্যেরা বাগদীদিগকেও অনাৰ্য্যবংশ বলিয়া ধরিয়া থাকেন। বাস্তবিক বাগদীদিগের আকার ও বর্ণ হইতে অনাৰ্য্যবংশ অনুমান করা অসঙ্গত বোধ হয় না। অনেকে বাগদী ও বাউরী এক আদিম জাতি হইতে উৎপন্ন বলিয়া থাকেন। আমাদিগের এমত ইচ্ছা নহে যে, বাঙ্গালার হিন্দুজাতিদিগের মধ্যে কোন কোন জাতি অনাৰ্য্যবংশ, তাহা একে একে নিঃশেষ করিয়া মীমাংসা করি। বাঙ্গালার শূদ্রদিগের মধ্যে অনেকাংশ যে অনাৰ্য্যবংশ, ইহাই দেখান আমাদিগের উদ্দেশ্য। এবং পূর্বপরিচ্ছেদে যে সকল উদাহরণ দিয়াছি, তাহাতে প্ৰমাণিত হইয়াছে যে, বাঙ্গালী শূদ্রের মধ্যে অনাৰ্য্যবংশ অতিশয় প্রবল। কিন্তু কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে, শূদ্র মাত্রেই অনাৰ্য্যবংশ । প্রথম বৰ্ণভেদ উৎপত্তির সময়ে সকল শূদ্ৰই অনাৰ্য্য ছিল বােধ হয়। কিন্তু ক্ৰমে আৰ্য্যসস্থত সঙ্কীর্ণ বর্ণ ও অসঙ্কীর্ণ আৰ্য্যবৰ্ণ যে এখন শূদ্রের মধ্যে মিশিয়াছে, ইহা আমাদিগের দৃঢ় বিশ্বাস। এখনকার সকল শূদ্রই অনাৰ্য্য, এই কথার অমূলকতা প্ৰতিপাদনা করিতে এক্ষণে প্ৰবৃত্ত হইব । প্ৰথম, কে আৰ্য্য, আর কে অনাৰ্য্য, ইহা মীমাংসা করিবার দুইটি মাত্র উপায়। এক ভাষা, দ্বিতীয় আকার । দেখা যাইতেছে যে, কেবল ভাষার উপর নির্ভর করিয়া বাঙ্গালার ভিতরে ইহার মীমাংসা হইতে পারে না। কেন না, সকল বাঙ্গালী শূদ্রই