পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাহুবল ও বাক্যবল එ8% নিবারিত হইতে পারে। হিন্দুসমাজ ভিন্ন অন্য সমাজে এ দুঃখ নাই। স্ত্রীগণ যে সম্পত্তির অধিকারিণী হইতে পারে না, ইহা বিলাতী সমাজের একটি সামাজিক দুঃখ ; ব্যবস্থাপক সমাজের লেখনীনির্গত এক ছত্ৰে ইহা নিবাৰ্য্য, অনেক সমাজে এ দুঃখ নাই । ভারতবর্ষাঁয়েরা যে স্বদেশে উচ্চতর রাজকাৰ্য্যে নিযুক্ত হইতে পারে না, ইহা আর একটি নিবাৰ্য্য সামাজিক দুঃখের উদাহরণ। যে সকল সামাজিক দুঃখ নিত্য ও অনিবাৰ্য্য, তাহারও উচ্ছেদের জন্য মনুষ্য যত্নবান হইয়া থাকে। সামাজিক দরিদ্রতা নিবারণ জন্য যাহারা চেষ্টিত, ইউরোপে সোশিয়ালিষ্ট কমু্যনিষ্ট প্রভৃতি নামে তাহারা খ্যাত। স্বানুবৰ্ত্তিতার সঙ্গে সমাজের যে বিরোধ, তাহাব লাঘব জন্য, মিল “Liberty” নামক অপূৰ্ব্ব গ্ৰন্থ প্রচার করিয়াছেন- অনেকের কাছে এই গ্ৰন্ত দৈবপ্রসাদ বাকাস্বরূপ গণ্য । যাহা আনিবাৰ্য্য, তাহার নিবারণ সম্ভাবে না ; কিন্তু আনিবাৰ্য্য দুঃখও মাত্রায় কমান যাইতে পারে । মে রোগ সাংঘাতিক, তাহারও চিকিৎসা আছে-যন্ত্রণা কমান যাইতে পারে । সুতরাং সাহারা সামাজিক নিত্য দুঃখ নিবারণের চেষ্টায় ব্যস্ত, তা হাদিগকে বুথ পরিশ্রমে রত মনে করা যাইতে পারে না । নিত্য এবং অপরিহার্য সামাজিক দুঃখের উচ্ছেদ সম্ভাবে না, কিন্তু অপর সামাজিক দুঃখগুলির উচ্ছেদ সম্ভব এবং মনুষ্যসাধ্য। সেই সকল দুঃখ নিবারণ জন্য মনুষ্যসমাজ সর্বদাই ব্যস্ত । মনুষ্যের ইতিহাস সেই ব্যস্ততার ইতিহাস । বলা হইয়াছে, সামাজিক নিত্য দুঃখসকল, সমাজ সংস্থাপনেরই অপরিহায্য ফল — সমাজ হইয়াছে বলিয়াই সেগুলি হইয়াছে । কিন্তু অপর সামাজিক গুঃখগুলি কে {থা হইতে আইসে ? সেগুলি সমাজের অপরিহার্য্য ফল না তই য়া ও কেন ঘটে ? তাহার নিবারণ পক্ষে, এই প্রশ্নের মীমাংস নিতান্ত প্ৰয়োজনীয় { এগুলি সামাজিক অত্যা চারজনিত । বোধ হয়, প্রথমে অত্যাচার কথাটি বুঝাইতে হইবে-নাহিলে অনেকে বলিতে পরিবেন, সমাজের আবার অত্যাচার কি ? শক্তির অবিহিত প্ৰয়োগকে ৩ ত্যাচার বলি । দেশ, মাধ্যাকৰ্ষণাদি যে সকল নৈসর্গিক শক্তি, তাহা এক নিয়মে চলিতেছে, তাহার কখনও অধিকা নাই, কখনও অল্পতা নাই ; বিধিবদ্ধ অনুল্লঙ্ঘনীয় নিয়মে তাহ চলিতেছে । কিন্তু যে সকল শক্তি মানুসের হস্তে, তাহার এরূপ স্থিরতা নাই । মনুষ্যের হস্তে শক্তি থাকিলেই, তাতার প্রয়োগ বিহিত হইতে পারে এবং অবিহিত হইতে পারে। যে পরিমাণে শক্তির প্রয়োগ হইলে উদ্দেশ্যটি সিদ্ধ হইবে, অথচ কাহারও কোন অনিষ্ট হইবে না, তাহাই নিহিত প্রয়োগ । তাহার অতিরিক্ত প্ৰয়োগ অবিহিত প্ৰয়োগ । বারুদের যে শক্তি, তাতার বিহিত প্রয়োগে শত্ৰুবধ হয়, অবিহিত প্রয়োগে কামান ফাটিয়া যায়। শক্তির এই অতিরিক্ত প্রয়োগই অত্যাচার । 88