পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ وه$20t' যত্নবান হাউন । কিন্তু তাহা বলিয়া অপ্রচলিত ভাষাকে সাহিত্যের ভাষা করিতে চেষ্টা করিবেন না । ন্যায়রত্ন মহাশয়ের মত সমালোচনায় আর অধিক কাল হরণ করিবার আমাদিগের ইচ্ছা নাই। আমরা এক্ষণে সুশিক্ষিত অথবা নব্য সম্প্রদায়ের মত সমালোচনায় প্ৰবৃত্ত হইব । এই সম্প্রদায়ের সকলের মত একরূপ নহে। ইহার মধ্যে এক দল এমন আছেন যে, তাহারা কিছু বাড়াবাড়ি করিতে প্ৰস্তুত। তন্মধ্যে বাবু শ্যামাচরণ গঙ্গোপাধ্যায়। গত বৎসর কলিকাতা রিভিউতে বাঙ্গাল। ভাষার বিস্ময়ে একটি প্ৰবন্ধ লিখিয়াছিলেন । প্ৰবন্ধটি উৎকৃষ্ট । র্তাহার মতগুলি অনেক স্থলে সুসঙ্গত এবং আদরণীয়। অনেক স্থলে তিনি কিছু বেশী গিয়াছেন । বহুবচন জ্ঞাপনে গণ শব্দ ব্যবহার করার প্রতি তঁাহার কোপদৃষ্টি । বাঙ্গালায় লিঙ্গভেদ তিনি মানেন না। পৃথিবী সে বাঙ্গালায় স্ত্রীলিঙ্গাবাচক শব্দ, ইহা তঁহার অসহ্য । বাঙ্গালায় সন্ধি তাহার চক্ষুঃশূল । বাঙ্গালায় তিনি “জনৈক’ লিখিতে দিবেন না | ত্ব প্রত্যয়ান্ত এবং যা প্ৰত্যয়ান্ত শব্দ ব্যবহার করিতে দিবেন না । সংস্কৃত সংখ্যাবাচক শব্দ, যথা—একাদশ বা চত্বারিং শৎ বা দুই শত ইত্যাদি বাঙ্গালায় ব্যবহার করিতে দিবেন না ! ভ্ৰাতা, কল্য, কণী, স্বর্ণ, তাম, পত্র, মস্তক, অশ্ব ইত্যাদি শব্দ বাঙ্গালী ভাষায় ব্যবহার করিতে দিবেন না । ভাই, কাল, কান, সোণা, কেবল এই সকল শব্দ ব্যবহার হইবে । এইরূপ তিনি বাঙ্গালাভাষার উপর অনেক দৌরাত্মা করিয়াছেন । তথাপি তিনি এই প্ৰবন্ধে বাঙ্গালাভাষা সম্বন্ধে অনেকগুলিন সারগর্ভ কথা বলিয়াছেন । বাঙ্গালা লেখকের তাহা স্মরণ রাখেন, ইহা আমাদের ইচ্ছা । শ্যামাচরণবাবু বলিয়াছেন এবং সকলেই জানেন যে, বাঙ্গালা শব্দ ত্ৰিবিধ। প্রথম, সংস্কৃতমূলক শব্দ, যাহার বাঙ্গালায় রূপান্তর হইয়াছে, যথা-গৃহ হইতে ঘর, ভ্ৰাতা হইতে ভাই । দ্বিতীয়, সংস্কৃতমূলক শব্দ, যাহার রূপান্তর হয় নাই । যথা—জল, মেঘ, সূৰ্য্য । তৃতীয়, যে সকল শব্দের সংস্কৃতের সঙ্গে কোন সম্বন্ধ নাই । প্রথম শ্রেণীর শব্দ সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, রূপান্তরিত প্রচলিত সংস্কৃতমূলক শব্দের পরিবৰ্ত্তে কোন স্থানেই অরূপান্তরিত মূল সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করা কীৰ্ত্তব্য নহে, যথা— মাগার পরিবর্তে মস্তক, ধামনের পরিবর্তে ব্ৰাহ্মণ ইত্যাদি ব্যবহার করা কীৰ্ত্তব্য নহে আমরা বলি যে, এক্ষণে বামনও যেমন প্ৰচলিত, ব্ৰাহ্মণ সেইরূপ প্ৰচলিত। পাতাও যেরূপ প্রচলিত, পত্র ততদূর না হউক, প্ৰায় সেইরূপ প্রচলিত । ভাই যেরূপ প্রচলিত, ভ্ৰাতা ততদূর না হউক, প্রায় সেইরূপ প্ৰচলিত। যাহা প্রচলিত হইয়াছে, তাহার উচ্ছেদে কোন ফল নাই এবং উচ্ছেদ সম্ভবও নহে । কেহ যত্ন করিয়া মাতা, পিতা, ভ্ৰাতা, গৃহ, তাম্র বা মস্তক ইত্যাদি শব্দকে বাঙ্গালা ভাষা হইতে বহিস্কৃত করিতে পারিবেন না । t