পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Nტ\სპ বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ উদরপূৰ্ত্তির পর ধনে হউক বা অন্য প্রকারে হউক, লোকমধ্যে যথাসাধ্য প্রাধান্য লাভ করাকে মনুষ্যগণ আপনাদিগের জীবনের উদ্দেশ্য বিবেচনা করিয়া কাৰ্য্য করে। এই প্রাধান্যলাভের উপায়, লোকের বিবেচনায় প্ৰধানতঃ ধন, তৎপরে রাজপদ ও যশ: | অতএব ধন, পদ ও যশ: মনুস্যজীবনের উদ্দেশ্য বলিয়া মুখে স্বীকৃত হউক বা না হউক, কাৰ্য্যত: মনুষ্যলোকে সর্ববাদিসম্মত। এই তিনটির সমবায়, সমাজে সম্পদ বলিয়া পরিচিত। তিনটির একত্রীকরণ দুর্লভ, অতএব দুই একটি, বিশেষতঃ ধন থাকিলেই সম্পদ বর্তমান বলিয়া স্বীকৃত হইয়া থাকে। এই সম্পদাকাজক্ষাই সমাজমধ্যে লোকজীবনের উদ্দেশ্যস্বরূপ অগ্ৰবৰ্ত্তী, এবং ইহাই সমাজের ঘোরতর অনিষ্টের কারণ। সমাজের উন্নতির গতি যে এত মন্দ, তাহার প্রধান কারণই এই যে, বাহা সম্পদ মনুষের জীবনের উদ্দেশ্যস্বরূপ হইয়া দাড়াইয়াছে।।*।। কেবল সাধারণ মনুষ্যদিগের কাছে নহে, ইউরোপীয় প্রধান পণ্ডিত এবং রাজপুরুষগণের কাছেও বটে। কদাচিৎ কখনও এমন কেহ জন্মগ্রহণ করেন যে, তিনি সম্পদকে মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্যমধ্যে গণ্য করা দূরে থাকুক, জীবনোদ্দেশ্যের প্রধান বিস্তু বলিয়া ভাবিয়া থাকেন। যে রাজ্যসম্পদকে অপর লোকে জীবনসফলকর বিবেচনা করে, শাক্যসিংহ তাহা বিস্ত্রকর বলিয়া প্রত্যাখ্যান করিয়াছিলেন। ভারতবর্ষে বা ইউরোপে এমন অনেকই মুনিবৃত্ত মহাপুরুষ জন্মিয়াছেন যে, তঁাহারা বাহা সম্পদকে ঐ রূপ ঘূণা করিয়াছেন । ইহারা প্রকৃত পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন, এমত কথা বলিতে পারিতেছি না । শাক্যসিংহ শিখাইলেন যে, ঐহিক ব্যাপারে চিত্তনিবেশ মাত্র অনিষ্টপ্ৰদ, মনুষ্য সর্বত্যাগী হইয়া নির্বাণাকাজক্ষী হউক । ভারতে এই শিক্ষার ফল বিষময় হইয়াছে। এইরূপ আরও অনেকানেক মুনিবৃত্ত মহাপুরুষ মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ভ্ৰান্ত হওয়াতে, ঐহিক সম্পদে অননুরক্ত হইয়াও, সমাজের ইষ্টসাধনে বিশেষ কৃতকাৰ্য্য হইতে পারেন নাই। সামান্যতঃ সন্ন্যাসী প্রভৃতি সর্বদেশীয় বৈরাগী সম্প্রদায় সকলকে উদাহরণ স্বরূপ নিদিষ্ট করিলেই, এ কথা যথেষ্ট প্ৰমাণীকৃত হইবে । স্কুল কথ, এই যে, ধনসঞ্চয়াদির ন্যায় সুখশূন্য, শুভফলশূন্য, মহত্ত্বশূন্য ব্যাপার প্রয়োজনীয় হইলেও কখনই মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য বলিয়া গৃহীত হইতে পারে না । এ জীবন ভবিষ্যৎ পারলৌকিক জীবনের জন্য পরীক্ষা মাত্র-পৃথিবী স্বৰ্গলাভের জন্য কৰ্ম্মভূমি মাত্ৰ—এ কথা যদি যথার্থ হয়, তবে পরলোকে সুখপ্রদ কাৰ্য্যের অনুষ্ঠানই জীবনের

  • স্বীকার করি, কিয়ৎপরিমাণে ধনাকাজক্ষা সমাজের মঙ্গলকর । ধনের আকাজক্ষা মাত্র অমঙ্গলজনক, এ কথা বলি না, ধন মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য হওয়াই অমঙ্গলকর ।