পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9१ ९ বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ আছে, এমত বিবেচনা করেন না। এ দিকে ছেলে ইস্কুল ছাড়িতে না ছাড়িতে একটি ক্ষুদ্র পলটনের ব্যাপ-রশিদের যোগাড়ে বাপ পিতামহ অস্থির। গরিব বিবাহিত তখন স্কুল ছাড়িয়া, পুথি পাঁজি টানিয়া ফেলিয়া দিয়া, উমেদওয়ারিতে প্ৰাণ সমৰ্পণ করিল। যোড় হাত করিয়া ইংরেজের দ্বারে দ্বারে হা চাকরি । হা চাকরি । করিয়া কাতর। হয় তা সে ছেলে একটা মানুষের মত মানুষ হইতে পারিত। হয় ত সে সময়ে আপনার পথ চিনিয়া জীবনক্ষেত্রে প্রবেশ করিতে পারিলে, জীবন সার্থক করিতে পারিত। কিন্তু পথ চিনিবার আগেই সে সকল ভরসা ফুরাইল, উমেদওয়ারির যন্ত্রণায় আর চাকরির পোষণে—সংসারধৰ্ম্মের জ্বালায়—আন্তর ও শরীর বিকল হইয়া উঠিল । বিবাহ হইয়াছে --ছেলে হইয়াছে, আর পথ খুঁজিবার অবসর নাই-এখন সেই একমাত্র পথ খোলা— উমেদওয়ারি । আর লোকের উপকার করিবার কোন সম্ভাবনা নাই—কেন না, আপনার স্ত্রী কন্যা পুত্রের উপকার করিতে কুলায় না।--তাহারা রাত্ৰিদিন দেহি দেহি করিতেছে । আর দেশের হিতসাধনের ক্ষমতা নাই, স্ত্রীপুত্রের হিতের জন্য সর্বস্ব পণ ! লেখা পড়া, ধৰ্ম্মচিন্তা—-এ সকলের সঙ্গে আর সম্বন্ধ নাই—ছেলের কান্না থামাইতেই দিন যায় । যে টাকাটা পেট্রিয়টিক আসোসিয়েসনে চাদ দিতে পারিত, ছেলে এখন তাহাতে বধুঠাকুরাণীর বালা গড়াইয়া দিল । অথচ বাঙ্গালার রামধনের শৈশবে ছেলের বিবাহ দিতে না পারিলে মনে করেন, ছেলেরাও সৰ্ব্বনাশ-নিজেরও সৰ্ব্বনাশ করিলেন । ছেলে থাকিলেই তাহার বিবাহ দিতেই হইবে, মনুস্যমাত্ৰকেই বিবাহ করিতে হইবে, আর বাপ মারি প্রধান কাৰ্য্য-শৈশবে ছেলের বিবাহ দেওয়া-এরূপ ভয়ানক ভ্ৰম যে দেশে সৰ্ব্বব্যাপী, সে দেশের মঙ্গল কোথায় ? যে দেশে বাপ মা, ছেলে সাতার শিখিতে না শিখিতে বন্ধুরূপ পােতর গলায় বঁাধিয়া দিয়া, ছেলেকে এই দুস্তর সংসারসমুদ্রে ফেলিয়া দেয়, সে দেশের উন্নতি হইবে ?