পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գյ বিবিধ প্ৰবন্ধ আচাৰ্য্য টিণ্ডল এক স্থানে ঈশ্বর নিরূপণের কাঠিন্য সম্বন্ধে বলিয়াছেন যে, যে ব্যক্তি একাধারে উৎকৃষ্ট কবি, এবং উৎকৃষ্ট বৈজ্ঞানিক হইবে, সেই ঈশ্বর নিরূপণে সক্ষম হইবে। প্রথম শ্রেণীর বৈজ্ঞানিকতা এবং প্রথম শ্রেণীর কবিত্ব, একাধারে এ পৰ্য্যন্ত সন্নিবেশিত হয় নাই। এক ব্যক্তি নিউটন ও সেক্ষপীয়রের প্রকৃতি লইয়া এ পৰ্য্যন্ত জন্মগ্রহণ করেন নাই । কিন্তু বৈজ্ঞানিক কবি কোচ না হইয়া থাকুন, দার্শনিক কবি অনেক জন্মগ্রহণ করিয়াছেন - ঋগ্বেদের ঋষিগণ হইতে রাজকৃষ্ণবাবু পৰ্যন্ত ইহার দৃষ্টান্তের অভাব নাই। দার্শনিক কবিগণ আপনাদিগকে ঈশ্বর নিরূপণে সমর্থ বিবেচনা করেন । শ্ৰীমদ্ভাগবতকার দার্শনিক এবং শ্ৰীমদ্ভাগবতকার কবি । তিনি দর্শনে '3 কাব্যে মিলাইয়া, ধৰ্ম্মের পুনরুদ্ধারে প্রবৃত্ত হইলেন। এবং এই ভূমণ্ডলে এরূপ দুরূহ ধ্যাপারে যদি কেহ কৃতকাৰ্য্য হইয়া থাকেন, তবে শাক্যসিংহ ও শ্ৰীমদ্ভাগবত কার ইহঁয়াছেন । দার্শনিকদিগের মতের মধ্যে একটি মত পণ্ডিতের নিকট অতিশয় মনোহর। সাংখ্যকার, মানস রসায়নে জগৎকে বিশ্লিষ্ট করিয়া, আত্মা এবং জড জগতে ভাগ করিয়া ফেলিলেন । জগৎ দ্বৈপ্রকৃতিক—তাহাতে পুরুষ এবং প্রকৃতি বিদ্যমান। কথাটি অতি নিগুঢ়,—বিশেষ গভীরার্থপূৰ্ণ । ইহা প্রাচীন দর্শনশাস্ত্রের শেষ সীমা । গ্ৰাক পণ্ডিতেরা বহু কষ্টে এই তত্ত্বের আভাসমাত্ৰ পাইয়াছিলেন। অদ্যাপি ইউরোপীয় দার্শনিকেরা এই তত্ত্বের চতুঃপার্শ্বে অন্ধ মধুমক্ষিকার ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন । কথাটার স্কুল মৰ্ম্ম যাহা, তাহা সাংখ্যদর্শনবিষয়ক প্রবন্ধে বুঝাইয়াছি। এই প্ৰকৃতি ও পুরুষ সাংখ্যমতানুসারে পরস্পরে আসক্ত, স্ফটিক পাত্রে জবাপুষ্পোপ প্ৰতি বিম্বের স্থায় প্রকৃতিতে পুরুষ সংযুক্ত, ইহাদিগের মধ্যে সম্বন্ধবিচ্ছেদই জীবের মুক্তি । এই সকল দুরূহ তত্ত্ব দার্শনিকোব মনোহর, কিন্তু সাধারণের বোধগম্য নহে। শ্ৰীমদ্ভাগবতকার ইহাকেই জনসাধারণের বোধগম্য, এবং জনসাধারণের মনে তাঁর করিয়া সাজি ইয়া, মু৩ ধৰ্ম্মে জীবন সঞ্চারের অভিপ্ৰায় করিলেন । মহাভারতে যে বার ঈশ্বরবিতার বলিয়া লোকমণ্ডলে গৃহীত ই ইয়াছিল, তিনি তঁাহাকেই পুরুষস্বরূপে স্বীয় কাব্যমধ্যে অবতীর্ণ করিলেন, এবং স্বকপোল হইতে গোপকন্যা রাধিকাকে সৃষ্ট করিয়া, প্ৰকৃতিস্থানীয় করিলেন । প্ৰকৃতি পুরুষের যে পরস্পরাসক্তি, বাল্যলীলায় তাহা দেখাইলেন ; এবং 'তদুভয়ে যে সম্বন্ধবিচ্ছেদ, জীবের মুক্তির জন্য কামিনীয়, ৩াতাও দেখাইলেন। সাংখ্যের মতে ইহাদিগের মিলনই জীবের দুঃখের মূল-তাই কবি এই মিলনকে অস্বাভাবিক এবং অপবিত্ৰ করিয়া সাজাইলেন । শ্ৰীমদ্ভাগবতের গৃঢ় তাৎপৰ্য্য, আত্মার ইতিহাস-প্ৰথমে প্ৰকৃতির সঠিত সংযোগ, পরে বিয়োগ, পরে মুক্তি । জয়দেবপ্রণীত তৃতীয় কৃষ্ণচরিত্রে এই রূপক একেবারে অদৃশ্য । তখন আৰ্য্যজাতির জ” তীয় জীবন দুর্বল হইয়া আসিয়াছে । রাজকীয় জীবন নিবিয়াছে-ধৰ্ম্মের বাদ্ধক্য আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। উগ্ৰতেজস্বী, রাজনীতিবিশারদ আৰ্য্যবীরের বিলাস প্রিয় এবং ইন্দ্ৰিয়পরায়ণ হইয়াছেন । তীক্ষ্ণবুদ্ধি মাজ্জিতচিত্ত দার্শনিকের স্থানে অপরিণামদর্শী স্মাৰ্ত্ত এবং গৃহসুখবিমুগ্ধ কবি অবতীর্ণ হইয়াছেন। ভারত দুর্বল, নিশ্চেষ্ট, নিদ্রায় উন্মুখ ভোগপরায়ণ । অস্ত্রের ঝঞ্চনার স্থানে রাজপুৰীসকলে নুপুরনিৰূণ বাজিতেছে-- বাহ এবং আভ্যন্তরিক জগতের নিগুঢ় তত্ত্বের আলোচনার পরিবর্তে ৭ “মিনীগণের ভাবভঙ্গীর নিগুঢ় তত্ত্বের আলোচনার ধূম পড়িয়া গিয়াছে। জয়দেব গোস্বামী এই