পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰকৃত এবং অতিপ্ৰকৃত 8) সংস্কৃতে এমন একখানি এবং ইংরাজিতে একখানি মহাকাব্য আছে যে, দৈব এবং অতিপ্রকৃত চরিত্র তাহার আনুষঙ্গিক বিষয় নহে, মূল বিষয়। আমরা কুমারসম্ভব এবং Paradise Tost নামক কাব্যের কথা বলিতেছি। মিলটনের নায়ক দেবপ্রকৃত ঈশ্বরবিদ্রোহী সয়তান, এবং তঁাহার অনুচরবর্গ। জগদীশ্বরের সহিত তাহাদিগের বিবাদ, জগদীশ্বর এবং তঁাহার • অনুচরের সহিত তাহাদিগের যুদ্ধ। মিলটন কোন পক্ষকেই সম্যক প্ৰকায়ে মানবপ্রকৃতিবিশিষ্ট করেন নাই। সুতরাং তিনি কাব্যরসের অত্যুৎকৃষ্ট অবতারণায় কৃতকাৰ্য্য হইয়াও, লোকমনোরঞ্জনে তাদৃশ কৃতকাৰ্য্য হয়েন নাই। Paradise Twost অত্যুৎকৃষ্ট মহাকাব্য হইলেও, প্ৰায় কেহ তাহা আনুপূর্কিবাক পাঠ করেন না। আনুপুর্বিবক পাঠ কষ্টকর হইয়া উঠে। মিলটনের ন্যা: প্রথম শ্রেণীর কবির রচনা না হইয়া যদি ইহা মধ্যম শ্রেণীর কোন কবির রচনা হইত, তবে বোধ হয়, কেহই পড়িত না । ইহার কারণ, মনুষ্যচরিত্রের অননুকারী দৈবচরিত্রে মনুষ্যের সহৃদয়ত হয় না। এই কাব্যে যেখানে আদম ও ইবের কথা আছে, সেইখানেই অধিকতর সুখদায়ক। কিন্তু ইহার এ কাব্যের প্রকৃত নায়ক নায়িকা নহে-তাহদের উল্লেখ আনুষঙ্গিক মাত্র । আদম ও ইব প্রকৃত মনুষ্যপ্রকৃত ; তাহারা প্ৰথম মনুষ্য, পার্থিব সুখ ও দুঃখের অনধীন, নিষ্পাপ ; যে সকল শিক্ষার গুণে মনুষ্য মনুষ্য, সে সকল শিক্ষা পায় নাই। অতএব এই কাব্যে প্রকৃত মনুষ্যচরিত্র বর্ণিত হয় নাই । কুমারসম্ভাবে একটিও মনুষ্য নাই। যিনি প্রধান নায়ক, তিনি, স্বয়ং পরমেশ্বর । নায়িকা পরমেশ্বরী । তদ্ভিন্ন পৰ্ব্বত, পর্বতমহিষী, ঋষি, ব্ৰহ্মা, ইন্দ্ৰ, কাম, রতি ইত্যাদি দেব দেবী। বাস্তবিক এই কাব্যের তাৎপৰ্য্য অতি গুঢ়। সংসারে দুই সম্প্রদায়ের লোক সৰ্ব্বদা পরস্পরের সহিত বিবাদ করে দেখা যায়। এক, ইন্দ্ৰিয়াপরবশ, ঐহিক সুখমাত্ৰাভিলাষী, পারিত্রিক চিন্তাবিরত ; দ্বিতীয়, বিষয়বিরত সাংসারিক সুখমাত্রের বিদ্বেষী, ঈশ্বরচিন্তামগ্ন। এক সম্প্রদায় কেবল শারীরিক সুখ সার করেন ; আর এক সম্প্রদায় শারীরিক সুখের অনুচিত বিদ্বেষ করেন। বস্তুতঃ উভয় সম্প্রদায়ই ভ্ৰান্ত । র্যাহারা ঈশ্বরবাদী, ঈশ্বর প্রদত্ত ইন্দ্ৰিয় অমঙ্গলকর বা আশ্রদ্ধেয় মনে করা তাহদের অকৰ্ত্তব্য । শারীরিক ভোগাতিশয্যই দৃশ্য ; নচেৎ পরিমিত শারীরিক সুখ সংসারের নিয়ম, সংসাররক্ষার কারণ, ঈশ্বয়াদিষ্ট, এবং ধৰ্ম্মের পুর্ণতাজনক । এই শারীরিক এবং পারিত্রিকের পরিণয় গীত করাই কুমারসম্ভব কাব্যের উদ্দেশ্য। পাথিব পৰ্ব্বতোৎপন্ন উমা শরীররূপিণী, তপশ্চারী মহাদেব পারিত্রিক শান্তির প্রতিমা । শান্তির প্রাপণাকাজক্ষায় উমা প্ৰথমে মদনের সাহায্য গ্ৰহণ করিয়াছিলেন, কিন্তু নিম্বফল হইলেন । ইন্দ্ৰিয়সেবার দ্বারা শান্তি প্রাপ্ত হওয়া যায় না । পরিশেষে আপন চিত্ত বিশুদ্ধ করিয়া, ইন্দ্ৰিয়াসক্তি সমলতা চিত্ত