পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(8 विदिक्ष ७eश् শোভিত, বিহঙ্গমাকুল, স্বচ্ছ বারিবিশিষ্ট সুন্দর সরোবর ; বিদ্যাপতির কবিতা দূরগামিনী বেগবতী তরঙ্গসন্ধুলা নদী। জয়দেবের কবিতা স্বর্ণহার, বিদ্যাপতির কবিতা রুদ্রাক্ষমালা । জয়দেবের গান, মুরজবীণাসঙ্গিনী স্ত্রীকণ্ঠগীতি ; বিদ্যাপতির গান, সায়াহ্নসমীরণের নিশ্বাস । আমরা জয়দেব ও বিদ্যাপতির সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছি, তঁহাদিগকে এক এক ভিন্নশ্রেণীর গীতিকবির আদর্শস্বরূপ বিবেচনা করিয়া তাহা বলিয়াছি। যাহা জয়দেব সম্বন্ধে বলিয়াছি, তাহা ভারতচন্দ্র সম্বন্ধে বৰ্ত্তে, যাহা বিদ্যাপতি সম্বন্ধে বলিয়াছি, তাহা গোবিন্দদাস চণ্ডীদাস প্রভৃতি বৈষ্ণব কবিদিগের সম্বন্ধে বেশী খাটে, বিদ্যাপতি সম্বন্ধে তাত খাটে না । আধুনিক বাঙ্গালি গীতিকাব্যলেখকগণকে একটি তৃতীয়শ্রেণীভুক্ত করা যাইতে পারে। তাহারা আধুনিক ইংরাজি গীতিকবিদিগের অনুগামী। আধুনিক ইংরাজি কবি ও আধুনিক বাঙ্গালি কবিগণ সভ্যতা বৃদ্ধিৰ কারণে স্বতন্ত্র একটি পথে চলিয়াছেন । পুর্বকবিগণ, কেবল আপনাকে চিনিতেন, আপনার নিকটবৰ্ত্তী যাহা, তাহা চিনিতেন । যাহা আভ্যন্তরিক বা নিকটস্থ, তাহার পুঙ্খাপুঙ্খ সন্ধান জানিতেন, তাহার অননুকরণীয় চিত্রসকল রাখিয়া গিয়াছেন। এক্ষণকার কবিগণ জ্ঞানী-বৈজ্ঞানিক, ইতিহাসবেত্তা, আধ্যাত্মিকতত্ত্ববিৎ । নানা দেশ, নানা কাল, নানা বস্তু তঁহাদিগের চিত্তমধ্যে স্থান পাইয়াছে। তঁহাদিগের বুদ্ধি বহুবিষয়িণী বলিয়। তঁহাদিগের কবিতা বহুবিষয়িণী হইয়াছে। তঁহাদিগের বুদ্ধি দূরসম্বন্ধগ্ৰাহিণী বলিয়া ভঁাহাদিগের কবিতাও দূরসম্বন্ধপ্রকাশিকা হইয়াছে। কিন্তু এই বিস্তৃতিগুণ হেতু প্রগাঢ়তাগুণের লাঘব হইয়াছে। বিদ্যাপতি প্রভৃতির কবিতার বিষয় সঙ্কীর্ণ, কিন্তু কবিত্ব প্রগাঢ় ; মধুসূদন বা হেমচন্দ্রের কবিতার বিষয় বিস্তৃত, কিন্তু কবিত্ব তােদৃশ প্রগাঢ় মঙ্গে। জ্ঞানবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কবিত্বশক্তির হ্রাস হয় বলিয়া যে প্ৰবাদ আছে, ইহা তাহার একটি কারণ। যে জল সঙ্কীর্ণ কূপে গভীর, তাহা তড়াগে ছড়াইলে আর গভীর থাকে না । কাব্যে অন্তঃপ্রকৃতি ও বহিঃপ্রকৃতির মধ্যে যথার্থ সম্বন্ধ এই যে, উভয়ে উভযের প্ৰতিবিম্ব নিপতিত হয়। অর্থাৎ বহিঃপ্রকৃতির গুণে হৃদয়ের ভাবান্তর ঘটে, এবং মনের অবস্থাবিশেষে বাহা দৃশ্য সুখকর বা দুঃখকর বোধ হয়-উভয়ে উভয়ের ছায়া পড়ে। যখন বহিঃপ্রকৃতি বর্ণনীয়, তখন অন্তঃপ্ৰকৃতির। সেই ছায়া সহিত চিত্রিত করাই কাব্যের উদ্দেশ্য। যখন আন্তঃপ্রকৃতি বর্ণনীয়, তখন বহিঃপ্রকৃতির ছায়া সমেত বৰ্ণনা তাহার উদ্দেশ্য । যিনি ইহা পারেন, তিনিই সুকবি। ইহার ব্যতিক্রমে এক দিকে ইন্দ্রিয়পরতা, অপর দিকে আধ্যাত্মিকতা দোষ জন্মে। এ স্থলে শারীরিক ভোগাসক্তিকেই ইন্দ্ৰিয়পরতা বলিতেছি না, চক্ষুরাদি ইন্দ্ৰিয়ের বিষয়ে আনুরক্তিকে ইন্দ্ৰিয়পরতা বলিতেছি । ইন্দ্ৰিয়পরতা দোষের উদাহরণ, জয়দেব । আধ্যাত্মিকতার উদাহরণ, Wordsworth.