পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্রৌপদী V বিজিত করিয়া অনুষ্ঠেয় কৰ্ম্ম সম্পাদনার্থ বিষয়ের উপভোগ করেন, তিনিই নির্লিপ্ত। র্তাহার আত্মার সঙ্গে ভোগ্য বিষয় আর সংশ্লিষ্ট নহে। তিনি পাপ ও দুঃখের उाऊँीठ । এইরূপ “নির্লেপ” বা “অনাসঙ্গ” পরিস্ফুট করিবার জন্য হিন্দুশাস্ত্রকারেরা একটা কৌশল অবলম্বন করিয়া থাকেন-নিলিপ্ত বা অনাসক্তকে অধিক মাত্রায় ইন্দ্ৰিয়াভোগ্য বিষয়ের দ্বারা পরিবেষ্টিত করেন। এই জন্য মহাভারতের পরবত্তী পুরাণকারেরা শ্ৰীকৃষ্ণকে অসংখ্য বরাঙ্গনামধ্যবৰ্ত্তী করিয়াছেন । এই জন্য তান্ত্রিকদিগের সাধন প্ৰণালীতে এত বেশী ইন্দ্ৰিয়াভোগ্য বস্তুর আবির্ভাব । যে এই সকল মধ্যে যথেচ্ছা বিচরণ করিয়া তাহাতে অনাসক্ত রহিল, সেই নিলিপ্ত। দ্ৰৌপদীর বহু স্বামীও এই জন্য । দ্রৌপদী স্ত্রীজাতির অন্যাসঙ্গ ধৰ্ম্মের মূৰ্ত্তিস্বরূপিণী। তৎস্বরূপে তঁহাকে স্থাপন করাই কবির উদ্দেশ্য। তাই গণিকার ন্যায় পঞ্চ পুরুষের সংসৰ্গযুক্ত হইয়াও দ্রৌপদী সাধলী, পাতিব্ৰত্যের পরাকাষ্ঠী । পপঃ পাতি দ্রৌপদীর নিকট এক পতি মাত্ৰ, উপাসনার এক বস্তু, এবং ধৰ্ম্মাচরণের একমাত্র অভিন্ন উপলক্ষ্য । যেমন প্ৰকৃত ধৰ্ম্মাত্মার নিকট বহু দেবতাও এক ঈশ্বর মাত্ৰ-ঈশ্বরই জ্ঞানীর নিকট এক মাত্র অভিন্ন উপাস্য, তেমনি পঞ্চ স্বামী অনাসঙ্গযুক্ত দ্রৌপদীর নিকট এক মাত্ৰ ধৰ্ম্মাচরণের স্থল । তাহান্স পক্ষাপক্ষ, ভেদাভেদ, ইতারবিশেষ নাই ; তিনি গৃহধৰ্ম্মে নিষ্কাম, নিশ্চল, নির্লিপ্ত হইয়া অনুষ্ঠেয় কৰ্ম্মে প্ৰবৃত্ত । ইহাই দ্রৌপদী-চরিত্রে অসামঞ্জস্যের সামঞ্জস্য। তবে ঈদৃশ ধৰ্ম্ম অতিদুঃসাধনীয়। মহাভারতকার মহাপ্রাস্থানিক পর্বে সেটুকুও বুঝাইয়াছেন। তথায় কথিত হইযাছে সে, দ্রৌপদীর অৰ্জ্জুনের দিকে কিঞ্চিৎ পক্ষপাত ছিল বলিয়া তিনি সেই পাপফলে সশরীরে স্বৰ্গারোহণ করিতে পারিলেন না-সর্বাগ্রেই পথিমধ্যে পতিত হইলেন । বোধ হয়, এখন বুঝিতে পারা যায় যে, দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামীর ঔরসে কেবল এক একটি পুত্র কেন ? হিন্দু শাস্ত্রানুসারে পুত্রোৎপাদন ধৰ্ম্ম ; গৃহীর তাহাতে বিরতি অধৰ্ম্ম । পুত্র উৎপন্ন হইলে বিবাহ সফল হইল ; না হইলে, ধৰ্ম্ম অসম্পূর্ণ রহিল। কিন্তু ধৰ্ম্মের যে প্রয়োজন, এক পুত্রেই তাহা সিদ্ধ তয় । একাধিক পুত্রের উৎপাদনা ধৰ্ম্মার্থে নিম্প্রয়োজনীয়কেবল ইন্দ্ৰিয়তৃপ্তির ফল মাত্র। কিন্তু দ্রৌপদী ইন্দ্ৰিয়সুখে নিলিপ্ত ; ধৰ্ম্মের প্রয়োজন সিদ্ধ হইলে, স্বামিগণের সঙ্গে তঁাহার ঐন্দ্ৰিক সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হইল। স্বামীর ধৰ্ম্মার্থ দ্ৰৌপদী সকল স্বামীর ঔরসে এক এক পুত্র গর্ভে ধারণ করিলেন ; তৎপরে নির্লেপ্যবশতঃ আর সন্তান গর্ভে ধারণ করিলেন না । কবির কল্পনার এই তাৎপৰ্য্য । এই সকল কথার তাৎপৰ্য্য বোধ করি, কেহই এমন বুঝিবেন না যে, যে স্ত্রীলোক অন্যাসঙ্গ ধৰ্ম্ম গ্ৰহণ করিবে, সেই পাঁচ ছয়টি মনুষ্যকে স্বামিত্বে বরণ করিবে-তােহা নাহিলে