অনুকরণ १७. বৰ্ত্তমান অবস্থায় তাহা দোষের নহে। বরং এরূপ অনুকরণই স্বভাবসিদ্ধ। ইহাতে যে বাঙ্গালির স্বভাবের কিছু বিশেষ দোষ আছে, এমন বোধ করিবার কারণ নির্দেশ করা কঠিন । ইহা মানুষের স্বভাবসিদ্ধ দোষ বা গুণ। যখন উৎকৃষ্টে এবং অপকৃষ্টে একত্রিত হয়, তখন অপকৃষ্ট স্বভাবতই উৎকৃষ্টের সমান হইতে চাহে। সমান হইবার উপায় কি ? উপায়, উৎকৃষ্ট যেরূপ করে, সেইরূপ কর, সেইরূপ হইবে। তাহাকেই অনুকরণ বলে। বাঙ্গালি দেখে, ইংরেজ সভ্যতায়, শিক্ষায়, বলে, ঐশ্বৰ্য্যে, সুখে, সৰ্ব্বাংশে বাঙ্গালি হইতে শ্ৰেষ্ঠ । বাঙ্গালি কেন না। ইংরেজের মত হইতে চাহিবে ? কিন্তু কি প্রকারে সেরাপ হইবে ? বাঙ্গালি মনে করে, ইংরেজ যাহা যাহা করে, সেইরূপ সেইরাপ করিলে, ইংরেজের মত সভ্য, শিক্ষিত, সম্পন্ন, সুখী হইব । অন্য যে কোন জাতি হউক না কেন, ঐ অবস্থাপন্ন হইলে ঐরাপ করিত। বাঙ্গালির স্বভাবের দোষে এ অনুকরণ প্ৰবৃত্তি নহে। অন্ততঃ বাঙ্গালির তিনটি প্রধান জাতি—ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থ, আৰ্য্যবংশসস্তৃত ; আৰ্য্যশোণিত তাহাদের শরীরে অন্যাপি বাহিতেছে ; বাঙ্গালি কখনই বানরের ন্যায় কেবল অনুকরণের জন্যই অনুকরণপ্ৰিয় হইতে পারে না। এ অনুকরণ স্বাভাবিক, এবং পরিণামে মঙ্গলপ্ৰদ হইতে পারে। যাহারা আমাদিগের কৃত ইংরেজের আহার ও পরিচ্ছদের অনুকরণ দেখিয়া রাগ করেন, তাহারা ইংরেজিকৃত ফরাসিদিগের আহার পরিচ্ছদের অনুকরণ দেখিয়া কি বলিবেন ? এ বিষয়ে বাঙ্গালির অপেক্ষা ইংরেজেরা অল্পাংশে অনুকারী? আমরা অনুকরণ করি, জাতীয় প্রভুর ; ইংরেজেরা অনুকরণ করেন-কাহার ? ইহা আমরা অবশ্য স্বীকার করি যে, বাঙ্গালি যে পরিমাণে অনুকরণে প্ৰবৃত্ত, ততটা। বাঞ্ছনীয় না হইতে পারে। বাঙ্গালির মধ্যে প্রতিভাশূন্য অনুকারীরই বাহুল্য ; এবং তঁহাদিগকে প্রায় গুণভাগের অনুকরণে প্ৰবৃত্ত না হইয়া দোষভাগের অনুকরণেই প্ৰবৃত্ত দেখা যায়। এইটি মহাদুঃখ । বাঙ্গালি গুণের অনুকরণে তত পটু নহে ; দোষের অনুকরণে ভূমণ্ডলে অদ্বিতীয়। এই জন্যই আমরা বাঙ্গালির অনুকরণপ্রবৃত্তিকে গালি পাড়ি, এবং এই জন্যই রাজনারায়ণবাবু যাহা যাহা বলিয়াছেন, তাহার অনেকগুলিকে যথার্থ বলিয়া স্বীকার করিতেছি । যেখানে অনুকারী প্ৰতিভাশালী, সেখানেও অনুকরণের দুইটি মহৎ দোষ আছে। একটি বৈচিত্র্যের বিস্ত্র। এ সংসারে একটি প্রধান সুখ, বৈচিত্র্য-ঘটিত । জগতীতলস্থ সর্ব পদার্থ যদি এক বর্ণের হইত, তবে জগৎ কি এত সুখদৃশ্য হইত ? সকল শব্দ যদি এক প্রকার হইত—মনে কর, কোকিলের স্বরের ন্যায় রব ভিন্ন পৃথিবীতে অন্য কোন প্রকার শব্দ না থাকিত, তবে কি সে শব্দ সকলের কর্ণজালাকার হইত না ? আমরা সেরূপ স্বভাব পাইলে, না হইতে পারিত। কিন্তু এক্ষণে আমরা যে প্রকৃতি লইয়া পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ a
পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৮১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।