মুখপাত্ররূপে গণ্য হয়, তবে এ জাতির শিক্ষা-দীক্ষার পরিচয় সত্যই লজ্জাজনক। দায়িত্বজ্ঞান কুত্রাপি নাই! য়ুরোপীয় সাহিত্যে আজ সমালোচনার যে নীতি ও পদ্ধতি প্রবর্ত্তিত হইয়াছে—সমগ্র রস-শাস্ত্রকে যেভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হইতেছে, যে পাণ্ডিত্য, প্রজ্ঞা ও রসবোধ, যে তীক্ষ্ণ অন্তর্দ্দৃষ্টি, যে আস্তিক্যবুদ্ধি এবং বিচারনৈপুণ্য তাহাতে প্রকাশ পাইতেছে—তাহাতে মুগ্ধ ও বিস্মিত হইতে হয়। আমাদের দেশে তাহার খবর অন্তত এই তথাকথিত সাহিত্যরথীরা রাখেন না। তাঁহারা সে সাহিত্যের ভাঁড়ামি ও চটকদার বুলি, দুষ্ট রসিকতা ও সুনিপুণ ফাজ্লামিকে গলাধঃকরণ ও বমন করিয়া, সস্তায় সাহিত্যিক এবং সমালোচক হইবার আকাঙ্ক্ষা করিয়াছেন। সেখানকার অতি-আধুনিকেরা শেক্সপীয়ারকে কবি বলেন না, এখানকার অতি-আধুনিকেরা তদ্দৃষ্টান্তে বঙ্কিমকেই তাঁহাদের আধুনিকত্বের পাদুকা বহন করাইতে চান।
রস সকল যুগেই এক—খাঁটি রসিকতারও একটা গূঢ় লক্ষণ আছে যাহা যুগাতীত। রসসৃষ্টি, জীবনকে বাদ দিয়া নয়,—বরং জীবনেরই গভীরতর পরিচয় হইতে হইয়া থাকে বলিয়া, এবং সেই জীবন ব্যক্তি ও জাতি, যুগ ও যুগান্তরে বিচিত্র বলিয়া, রসের রূপসৃষ্টি, সকল যুগের সকল কবির কল্পনায় একই রূপ হয় না। সাহিত্যের ইতিহাস যাঁহারা লেখেন, বা সাহিত্যের সমালোচনা যাঁহারা করেন, তাঁহারা ইহার কারণ জানেন; যাঁহারা রসিক মাত্র—সাহিত্যজ্ঞানী নহেন—তাঁহারা কারণ না জানিয়াও রসসৃষ্টির সেই বৈচিত্র্য সাগ্রহে উপভোগ করেন এবং তাহাতে তাঁহাদের রুচি যেমন আরও মার্জ্জিত ও উদার হয়, তেমনই