পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় ভাগ i >ぐりぐ。 ক্রমে এই ভাবের উদয় হয় যে, বাহ ব্যাপার এবং আন্তরিক ব্যাপার, ইতারা পরস্পর জুভিন্ন—অন্তোন্তের প্রতিরূপ মাত্র। মানস-পূজার একটা প্রধান অঙ্গ ঘটুচক্র ভেদ। এই ব্যাপারে অনেকটা বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে চিত্রিত করিয়া রাখিতে হয়, পর্য্যায়ক্রমে একের পর এক তাহার পর এক করিয়া ভিন্ন ভিন্ন বিষয় মানসচক্ষুর সমক্ষে আনিতে হয়, এবং সমুদয়টর কোথাও কিছু অসম্পূর্ণ বা অফুট রাখিবার যো থাকে না। এই অভ্যাস অক্ষুটভাব গ্রহণের নিতান্ত বিরোধী । এবং সেই জন্য প্রকৃতশিক্ষাগ্রহণের অত্যন্ত উপযোগী। ষটুচক্রভেদ অভ্যস্ত হইলে আবছায় মাত্র দেখিয়া আর তৃপ্ত হইবার পথ থাকে না—পরিষ্কাররূপে কিছু দেখিতে না পাইলে মনের কষ্টানুভব হয় এবং সেই কষ্ট নিবারণের নিমিত্ত যত্ন করা নিতান্ত প্রয়োজনীয় হইয়া উঠে। পক্ষান্তরে ষটুচক্রভেদ সাধন করিতে করিতে পৰ্য্যায়ক্রম অর্থাৎ কাৰ্য্যকারণ সম্বন্ধটা অতি স্পষ্টরূপেই হৃদগত হইয়া যায়। সকল ব্যাপারই এক মূল শক্তিতে পরিণত এই সংস্কার দৃঢ়তর হইয়। যায়। অতএব অতি সুস্পষ্টরূপে মানসচিত্র প্রস্তুত করিবার ক্ষমতা—বাহব্যাপারকে আভ্যন্তরীণ ব্যাপীরেরই প্রতিরূপ স্বরূপ বোধ—অঙ্কুট মানসদৃষ্টিতে অদন্তোষ এবং কাৰ্য্যকারণ সম্বন্ধের দৃঢ়তা জ্ঞান, এই সমুদয় মানসপূজা অভ্যাসের ফল। অর্থাৎ মানস পূজায় মনের স্থিরতা, অভিনিবেশ, স্বক্ষদর্শন, তাৎপর্য্য গ্রহণে আসক্তি এবং ব্যাপ্তি জ্ঞান সম্যকৃরূপে মার্জিত হওয়াতে সমস্ত বুদ্ধিবৃত্তিকে শাণিত করিয়া তুলে । তদ্ভিন্ন পূজাবিধির নিত্যত্ব থাকায় মনের চাঞ্চল্য একেবারেই নিবারিত হইয়া যায় । কোন কাজ ভাল লাগিলে করিব, ভাল না লাগিলে করিব না, পূজার অনুশীলনে এই চঞ্চলভাব একবারেই জন্মিতে পারে না । এক্ষণকার ছাত্রবৃন্দের মধ্যে এইরূপ চাঞ্চল্যের বিশেষ প্রাদুর্ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। আমাদিগের দেশে অনেককালের শিক্ষাগুণে বিধিসমূহের নিত্যত্ব উপলব্ধ হইয়া গিয়াছিল। ক্রমে ক্রমে সেই অভ্যাসের লোপ পাইয়া আসিতেছে। প্রয়োজন পড়িলেই করিব, বিন সাক্ষাৎ প্রয়োজন বোধে কিছুই করিব না, এই পাশৰভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাইতেছে । আমি জানি বিদ্যালয়ের ছাত্রের সমস্ত বৎসর ধরিয়া প্রায়ই বিশেষ পরিশ্রম করিয়া পুস্তক আলোচনা করেন না ; পরীক্ষার সময়ে একেবারে হাড়ভাঙ্গ পরিশ্রমে প্রবৃত্ত হয়। পূজাদি নিত্যকৰ্ম্ম সাধনের প্রণালী যত দিন অবাধে প্রচলিত হইতেদি, ততদিন এই দোষ জন্মিতে পায় নাই । -".