পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
বিবিধ সমালোচন।

 এবং দুর্ম্মুখের মুখে সীতার অপবাদ শুনিয়াও বলিলেন,

সতাং কেনাপিকার্য্যেণ লোকস্যারাধনম্ ব্রতং
যৎ পূজিতং হি তাতেন মাঞ্চ প্রাণাংশ্চমুঞ্চতা।[১]

 ভবভূতির রামচন্দ্র এই বিষম ভ্রমে ভ্রান্ত হইয়া কুলধর্ম্ম এবং রাজধর্ম্ম পালনার্থ, ভার্য্যাকে পবিত্রা জানিয়াও ত্যাগ করিলেন। রামায়ণের রামচন্দ্র সেরূপ নহেন। তিনিও জানিতেন যে সীতা পবিত্রা,—

অন্তরাত্মা চ মে বেত্তি সীতাৎ শুদ্ধাং যশস্বিনীম্।

তিনি কেবল রাজকুলসুলভ অকীর্ত্তিশঙ্কা বশতঃ পবিত্রা পতিমাত্র জীবিতা পত্নীকে ত্যাগ করিলেন। “আমি রাজা শ্রীরামচন্দ্র ইক্ষাকুবংশীয়, লোকে আমার মহিষীর অপবাদ করে! আমি এ অকীর্ত্তি সহিব না—যে স্ত্রীর লোকাপবাদ, আমি তাহাকে ত্যাগ করিব।” এইরূপ রামায়ণের রামচন্দ্রের গর্ব্বিত চিত্তভাব।

 বাস্তবিক সর্ব্বত্রই, রামায়ণের রামচন্দ্র হইতে ভবভূতির রামচন্দ্র অধিকতর কোমল প্রকৃতি। ইহার এক কারণ এই, উভর চরিত্র, গ্রন্থ রচনার সময়োপযোগী। রামায়ণ প্রাচীন গ্রন্থ। কেহ কেহ বলেন যে উত্তরাকাণ্ড বাল্মীকি প্রণীত নহে। তাহা হইক বা হউক, ইহা যে প্রাচীন রচনা তদ্বিষয়ে সংশয় নাই। তখন আর্য্যজাতি বীরজাতি ছিলেন। আর্য্য রাজগণ বীরস্বভাবসম্পন্ন ছিলেন। রামায়ণের রাম মহাবীর, তাঁহার চরিত্র গাম্ভীর্য্য এব ধৈর্য্য পরিপূর্ণ। ভবভূতি যৎকালে কবি—তখন ভারতবর্ষীয়েরা আর সে চরিত্রের নহেন। ভোগাকাঙ্ক্ষা, অলসাদির দ্বারা, তাঁহাদের চরিত্র কোমলপ্রকৃত হইয়াছিল।

  1. “লোকের আরাধনা করা সাধু ব্যক্তিদিগের পক্ষে সর্ব্বতোভাবেই বিধেয়, এবং এইটি তাঁহাদের পক্ষে সহ মহৎব্রতস্বরূপ। কারণ পিতা আমাকে এবং প্রাণ পরিত্যাগ করিয়াও তাহা প্রতিপালন করিয়াছিলেন।”—ঐ