পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান bró: যতীন বিম্মিত স্বরে বল্লে—কি হোল ? পুষ্প বল্লে—কিছু না । যতীন নাছোড়বান্দা, সে বার বার বলতে লাগলে—কি হোল বল না পুপ ? বলবে না ? অবশেষে পুষ্প বল্লে—আশা-বোঁদিকে খুন করতে যাচ্চে তার সেই উপপতি নেত্য— —সে কি ! @ —ঐ যে, দেখতে পাচ্চ না ? যতীন ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে বলে—চলো চলো ছুটে যাই, সামলাই গিয়ে—আমি তো কোনো দিকে কিছু দেখচি নে—ওঠে । বিস্মিত যতীন-পুষ্পের দিকে চেয়ে দেখলে যে তার যাবার কোন ব্যস্ততা নেই। সে চুপ করে বসেই রইল, কিছুক্ষণ পরে পুষ্পের বিশাল আয়ত চোখ দুটি বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। যতীন বল্লে—কি হয়েচে, চলে চলো— —গিয়ে কি হবে । এ যাত্রা রক্ষা হোল গিয়ে— —বেঁচে গিয়েচে ? • —আপাতত বটে। আহা, কি দুঃখ আশা-বৌদির ! —আমি সেখানে যাবো পুষ্প । চলো দেখা যাক— –GI] | —তোমার ওই সব কথা আমার ভাল লাগে না পুপ, সত্যি বলচি । আমি আলবৎ যাবো সেখানে । আমার মন কেমন হচ্চে বল তো ? —সেজন্যেই তোমার আরও যাওয়া উচিত নয়। দেখে কষ্ট পাবে খুব । —চলো পুষ্প, তোমার পায়ে পড়ি, আচ্ছা তুমি বোঝে সব, অথচ মাঝে মাঝে— অগত্যা পুপ ওকে নিয়ে কলকাতায় আশাবু বাসায় এসে উপস্থিত হোল। তখন যতীন বুঝতে পারলে কেন পুপ এখানে তাকে আনতে চায় নি। নেত্য আজকাল মদ খায়, মাতাল অবস্থায় এসে দিন-দুপুরে সে আশাকে এমন মার দিয়েচে যে, সে ঘরের মেঝেতে পড়ে ভয়ার্ত চোখে দুর্দান্ত মাতালটার দিকে চেয়ে আছে। দরজার চৌকাঠের এপারে একখান নেপালী কুকুরি পড়ে, সম্ভবত নেতার হাত থেকে ঠিকরে পড়ে থাকবে । ওদের দোরের বাইরে আশপাশের ঘরের ভাড়াটের জড়ো হয়ে উকি মেরে মজা দেখচে । নেত্য মত্ত অবস্থায় টলচে ও হাত নেড়ে নেড়ে জোর গলায় আস্ফালন করচে–ওকে আমি আজ খুন করে ফেলবো—আচ্ছা পাল মশায়, আপনি বিচার করুন, ওকে কে খেতে দিচ্চে, পরতে দিচ্চে ? ও দেশে না খেয়ে মরছিল কিনা ওকে জিজ্ঞেস করুন না ? আমি মশাই হক কথা হক কাজ বড় ভালবাসি। আমি আনলাম ওকে এখানে,খাওয়াই পরাই, অথচ সেই শস্তু ব্যাটা এসে তলায় তলায় ফুর্তি মারে। কত দিন পই পই করে বারণ করিচি–করি নি ? তেমন পুরুষ বাপে নেত্যনারাণের জন্ম দেয় নি –আজ তোকে খুন করে ফাসি যাবে, সেও থোড়াই কেয়ার করে এই শৰ্মা এত বড় তোর বদমাইসি ! কম করেচি আমি তোর জন্তে ? তোর নিজের বিয়ে করা ভাতার কোনো দিন তোকে খেতে দেয়নি, আর আমি কিনা:--দিয়েচে কোনো দিন সেই যতীন ?