পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান sԳ আবার সেই উচ্চ আত্মিকলোকের বায়ুস্তর, চক্ষের নিমেষে পুষ্পের সাহায্যে যতীন শত শত যোজন, যোজনের পর যোজন পার হয়ে চললো। করুণাদেবার আশ্রম সেই ক্ষুদ্র গ্রহটিতে ওরা পৌছে দেখলে কেউ কোথাও নেই। সেই কুস্থমিত উপবন, সেই প্রাচীন বৃক্ষতল যেখানে রাজরাজেশ্বরীর মত রূপসী দেবী সেদিন এলিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন, আজ সে স্থান জনশূন্ত । যতীন হতাশার স্বরে বল্লে—তাই তো ! এ যে দেখচি– —জগৎ-সংসারের কাজে সর্বদা ঘুরচেন, কি জানি কোথায় গিয়েচেন – –কিন্তু কি স্বদের দেশ এটা ! আমার ইচ্ছে করে এখানেই থাকি । বুড়োশিবতলার ঘাট এমন করে নেওয়া যায় না ? —অনেক বেশি শক্তি দরকার এমন দেশ গড়তে, আমার তা নেই যতীনদী। এদেশ শুধু বাইরের প্রাকৃতিক দুষ্ঠ নিয়ে সুন্দর হয় নি, মনের ওপর এর প্রভাব বুঝতে পারচো নিশ্চয়ই । আমরা যেন অনেক উচু জীব হয়ে গিয়েচি , শ্রান্তি নেই ; ক্লাস্তি নেই, দেহমন কত উচু ধরনের হয়ে গিয়েচে । • এমন সময় একটি বিস্ময়কর আবির্ভাবের মত করুণাদেবী হঠাৎ যেন জ্যোতিঃপদ্মের মত ফুটে উঠলেন সেই বনস্থলীর প্রান্তে । স্নেহ ও প্রসন্নতা দেবীর বিশাল চক্ষু দুটির ঘননীল তারকায় । হেসে বল্লেন—আমি তোমাদের দেখে এক জায়গা থেকে ফিরে এলাম — পুষ্প লজ্জিত ও অপ্রতিভের স্বরে বল্লে—আপনার কাজে বাধা দিলাম দেবী ? করুণাদেবী হেসে বল্লেন—না । আমিও ইচ্ছে করেছিলাম তোমরা আজ এখানে আসবে —বসে, এসো এই গাছের তলায় । যতীন ও পুষ্প গাছের তলায় ওঁর পাশে বসে পথিক দেবতার অদ্ভুত আবির্ভাবের ব্যাপার বল্পে । করুণাদেবী সব শুনে বল্পেন—ভগবান, বা ব্রহ্মের অস্তিত্বে অবিশ্বাসী কোনো নাস্তিক দেবতা, তবে মহাশক্তিধর বটে। আমার জানা নেই । যতীন বল্পে—এত যিনি দেখে বেড়াচ্চেন তিনি নাস্তিক ? – ওঁরা অন্য বিবর্তনের প্রাণী । —পৃথিবীর নয় ? —লা, অন্য কল্পের । সে শুনবে এখন । চলো, যেখানকার কাজ ফেলে এখানে এসেচি, সেখানে তোমাদের নিয়ে যাই । দুজনেই চোখ বৈাজে। যতীনের জ্ঞান যাতে থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে, নয়তো সে উচ্চস্তরে গিয়েও কিছু দেখতে পাবে না, বুঝতে পারবে না। এক মুহূর্তে ওরা অনুভব করলে খুব অদ্ভুত এক জায়গায় এসেচে। ওরা এক নিমেষে যেন বিরাট আত্মা হয়ে গিয়েচে, বাধা বন্ধনহীন সর্বসংস্কারমুক্ত দেবাত্ম। দেশ ও কাল উপন্যাসের কাহিনী যেন,—এই ছিল কোথায়, এই এল কোথায় । দেশ অতিক্রম করতে হোল না, কালের ব্যবধান অনুভূত হোল কই ? সেও এক বিচিত্র দেশ। বাতাসে যেন নব প্রস্ফুটিত মৃণালিনীর স্বগন্ধ } এক বিশাল মুনীল সমুদ্রের ঢেউ তটশিলায় এসে আছড়ে পড়চে ; সমূত্রের মাঝে মাঝে ম্যাজেণ্টা রঙের, বি. র. ৮—৭