পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

loyo অমৃভূতি জাগায় এই সংসারের শত শত মুখ দুঃখ, আশাহত অসহায় নরনারীর ব্যথা। যতীনের এ মনোভাব লেখকের নিজেরই ৷ "তাই এই মাত্র অন্ধকারে কাছারীর পথ দিয়ে বেড়াতে বেড়াতে ভাবছিলাম, ভগবান ‘আমি তোমার অন্ত স্বৰ্গ চাই না—তোমার দেবলোক পিতৃলোক বিষ্ণুলোক—তোমার বিশাল অনন্ত নক্ষত্রজগৎ তুমি পুণাত্মা মহাপুরুষদের জন্তে রেখে দিও। যুগে যুগে তুমি এই মাটির পৃথিবীতে আমাকে নিয়ে এস, এই ফুলফল, এই মুখদু:খের স্থতি, এই মুগ্ধ শৈশবের মায়াজগতের মধ্যে দিয়ে বার বার যেন আসাযাওয়ার পথ তোমার আশীর্বাদে অক্ষয় হয়।’ ( স্মৃতির রেখা ) এই পঞ্চাশ ঘাট বছরের এবারকার মতো জীবনেই কি সারা জীবন ফুরিয়ে গেল ! এই -দুপুর, এই প্রথম বসন্তের আবেশ, এই নীল আকাশ, এই বাঁশের শুকনো পাতা ও খোলার আহান, তেলাকুচোলতার দুলুনি—এসব যে বড় ভাল লাগে । ( স্থতির রেখা ) ‘কোথায় লেখা থাকবে তার তিন হাজার বৎসর পূর্বের এক বিস্তৃত অতীতের সেসব আনন্দভরা জীবনযাত্র, বহুদিন পরে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে বেলেরপানা খাওয়া মধুময় অপরাহটি, বাশবনের ছায়ায় অপরাহ্লের নিদ্রা ভেঙ্গে পাপিয়ার সে মনমাতানে ডাক, গ্ৰাম্য নদীটির ধারে খাম তৃণদলের উপর বসে বসে কত গান গাওয়া, কত আনন্দকল্পনা, এক বৈশাখের রাত্রিতে প্রথম বর্ষণসিক্ত ধরণীর সেই মৃদুস্বগন্ধ যা তার নববিবাহিতা তরুণী পত্নীর সঙ্গে সে উপভোগ করেছিল ? ( স্থতির রেখা ) 够 কে জানে এই জন্মের এই জীবনের প্রতি লোভ ও নস্ট্যালজিয়াই তাকে পরজন্মে বিশ্বাসী করেছিল কি না। আবার ফিরে আসবেন, পাচশো বছর পরে হোক কি তিন হাজার বছর পরেই হোক, একদিন আবার অন্তত এমনি এক পল্লীবধুর ঘরে জন্মগ্রহণ করে সামান্ত সাধারণ জীবনের রসাস্বাদ করবেন-এ আশ্বাস অবলম্বন না করলে বোধ করি ইপিয়ে উঠতেন—তাই নিজের গরজেই সেই আশাটিকে আকড়ে ধরেছিলেন হয়ত— ‘আমি এই যাওয়া-আসার স্বপ্নে ভোর হয়ে বড় আনন্দ পাই। আবার যে আসতে হবে তার পর, তাও আমি জানি “আবার বহুদূর জন্মান্তরে হয়তো ফিরতে হবে। পাঁচশো বছর পরের সুর্যের আলোকে একদিন অসহায় অবোধ শিশু-নয়ন দুটি মেলবো। পাচশো বছর পরের পাখীর গান, ফুলবন, জ্যোৎস্না আবার আমাকে অভ্যর্থনা করে নেবে। কোন অজানা দেশের অজানা পর্ণকুটিরে কোন অজ্ঞাত দেশের অজ্ঞাত ছায়াঝোপের তলে মাঠে বনে মুগ্ধ শৈশব কাটিয়ে–অনাগত মা-বাবার স্নেহের স্বধায় মানুষ হবে।’ (স্মৃতির রেখা ) এদিক দিয়ে লেখকও হয়ত ছিলেন ঘোরবদ্ধ-জীব, এই জীবনের আসক্তিতেই বদ্ধ। বিভূতিভূষণের আর একটি জীবনশর্ত ছিল–গতি। অচল অনড় স্থাণু জীবন তিনি একেবারেই পছন্দ করতেন না। অনেক দেখব, কেবল ঘুরে বেড়াৰু, আরও দেখব, আরও। দেশ বিদেশ, বিশ্ব-এই ছিল বাল্যকাল থেকে তার