পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান Σ ο 4 তারপরে নক্ষত্ৰজ্যোৎস্নায় প্লাবিত আকাশপথে এক বিশাল মহাগ্রহ ওদের দিকে যেন দ্রুত ছুটে আসচে। করুণাদেবী বজেন—বৃহস্পতি ! কিন্তু বৃহস্পতি খুব বড় মশালের আলোর মত ওদের দক্ষিণে দুরে পড়ে রইল। ওরা অন্ত একটি ক্ষুদ্র পৃথিবীর খুব নিকটে এসে তার বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়লে । যতীন বল্লে—কিসে যেন পড়েছিলুম, পৃথিবী ছাড়া সোলার সিস্টেমের অন্য কোনো কিছুতে মানুষ নেই । গ্রহদেব বল্পেন—সে সব কথা এখন থাকৃ। এই পৃথিবীটা দেখে নাও আগে— পৃথিবীর মত অবিকল সে স্থান, খুব বেশি ফুল, ছোট বড় নদী । বসন্তের হাওয়া বইচে, বিহঙ্গের স্বস্বর সর্বত্র, নির্মল জলাশয় । গ্রহটির একদিকে রাত্রির অন্ধকার, অন্যদিকে দিবসের আলো । যে অংশে ওরা গেল সেখানে মানুষের কর্মব্যস্ততা নেই, নিশ্চিন্ত মনে সকলে নিজের নিজের বাড়ীতে বসে আছে। গৃহস্থাপত্য অতি স্বন্দর, সব রকম শিল্পকলার অদ্ভূত উন্নতি হয়েচে সেখানে, দেখেই মনে হোল, সর্বত্র সঙ্গীত, বাদ্য নৃত্য । অত্যন্ত সুন্দরী মেয়েরা বনে উপবনে ভ্রমণ করে বেড়াচ্চে পরম নিশ্চিন্ত মনে, যেন তাদের হাতে অতি সুদীর্ঘ অবকাশ, যেন সারা দিনমান শুধু কমলের বনে অলস পাদচারণ জীবনের সব মুহূর্তগুলি ভরে দেবে অমৃতে । শাস্ত ও অপরূপ সৌন্দর্যের রূপায়তন সে পৃথিবীর মুখামল প্রাস্তরে, ফুলফোটা বনে ঝোপে গদ্ধে ভরা কুঞ্জতলে । বৃহস্পতির আলো পড়ে যে অংশে রাত্রির অন্ধকার, সে অংশের শোভাও চমৎকার —তবে সমগ্র পৃথিবীটি একটি নিশ্চিন্ত,নিরুপদ্রব শান্তির গভীরতায়, ব্যস্ততাহীন জীবনমুহূর্তগুলির পুঞ্জীভূত ভাবে যেন ঘুমিয়ে আছে, এলিয়ে আছে, কিসের অলীক স্বপ্নে দিনরাত্রি বিভোর । করুণাদেবী বল্পেন—এই দেখ যে পৃথিবীর কথা তোমায় বলেছিলাম । —স্লো—মানে ধীরগামী পৃথিবী ? ' ' . করুণাদেবী হেসে ফেলতেই যতীন অপ্রতিভ হয়ে বল্পে—না, ইংরিজিটা আপনি হয় তো জানেন কি নী—মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল—ও ভাষা কি আপনারা-মানে মেচ্ছ ভাষা— গ্রহদেব বল্পেন-তুমি এখনও বুঝলে না। আমাদের কোনো ভাষা নেই, যখন যে পৃথিবীতে, যে মানুষের সঙ্গে কথা কই—তাদের ভাষাই আমাদের ভাষা। পৃথিবীতে প্রচলিত যে কোনো ভাষাই হোক—তা আমাদের আপন । ইটালী দেশের কোনো লোকের সঙ্গে কথা বলবার সময় তাদের ভাষাতেই বলবো – —আপনাদের মধ্যে কথাবার্তা তা হোলে-কি ভাষায়—কেন, বাংলাতেই তো আপনাদের মধ্যে বলছিলেন ? করুণাদেবী বল্লেন—মুখ দিয়ে কথা বলার দরকার হয় না কোনো স্বর্গেই-চতুর্থস্তরের ওপরে কোথাও । মনের মধ্যে পরম্পরের কথা ফুটে ওঠে—আরও ওপরে স্বর্গে রঙীন আলোর বিদ্যুৎশিখার মত আলোর ভাষায় আদানপ্রদানে কথাবার্তা চলে । আমাদের ভাষা তোমাদের মৃত “কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো” তা হয় না। মরমেই আগে পশে-কাম গুনতেই পায় না—শোনবার দরকার হয় না। কিন্তু তোমাদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হচ্চে বলেই আমরা মুখের