পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ა e « দিন, দীর্ঘ রাত্রি, দীর্ঘ পথ, দীর্ঘ বছর এখানে। মাতুষও ধীর গতিতে চলে, বহু সময় নিয়ে কাজ করে, বহু সময় নিয়ে আমোদ করে, বদলায় অনেক সময় নিয়ে । পৃথিবীর মত তাড়াহুডো নেই, ব্যস্ততা নেই। —এদের আয়ু ? —তিনশো বছর প্রায়, তোমার পৃথিবীর হিসেবে । ধীরগামী আত্মা, পৃথিবীর পঞ্চাশ-যাট বছর বয়সে যার উন্নতি করতে পারবে না, কিছু বুঝতে পারবে না—এখানে পুনর্জন্ম গ্রহণ করিয়ে দেওয়া হয় । এখানে তারা যাতে ঘুমিয়ে না পড়ে তার ব্যবস্থা আছে । —কি রকম ব্যবস্থা বড় জানতে ইচ্ছে হচ্চে— দেবতা হেসে বল্লেন–রুদ্র ব্যবস্থা কিছু নেই, পৃথিবীতে যেমন আছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, ব্যাধি, মহামারী, বিপ্লব, দুর্ভিক্ষ। এখানকার মানুষেরা একটু অলস, একটু ধীর-বুদ্ধি--এদের ওপর দয়া করতে হয় অনেকখানি। সবই তার ব্যবস্থা (এখানে গ্রহদেবের মুখশ্ৰী শ্রদ্ধায়, সন্ত্রমে, ভক্তিতে কোমল হয়ে এল ), তিনি র্তার অসীম করুণায় এ ব্যবস্থা করেচেন-- আমরা তার নিয়োজিত তৃত্য মাত্র। এ কি দেখচে । এর চেয়েও ধীরগামী জগৎ আছে, তবে এ সৌরমণ্ডলে নয় । তিনিই এই সব অলস জড়বুদ্ধি জীবের জগতে উচ্চস্তরের দেবদূত পাঠিয়ে দেন, তারা দেহধারণ করে আসেন এদের শিক্ষা দিতে। তারাই এ সকল পৃথিবীর শ্ৰীকৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, শ্রীচৈতন্য, শঙ্কর, ব্যাস, দ্বৈপায়ন—সবাইকে তার লীলাসহচর না করে নিলে তার মুখ নেই। র্তার অপার অনস্ত করুণার কথা তোমরা কি জানো ? কেবল দুঃখ হয় মানুষে তাকে আগাগোড়া ভুল বুঝছে। কে র্তাকে জানে বা জানবার চেষ্টা করে ? মানুষ যদি এক পা এগিয়ে যায়, তিনি তিন পা এগিয়ে আসেন মানুষের দিকে। অথচ সবাই নিজেকে নিয়ে উন্মত্ত, পৃথিবীর মুখ নিয়ে দিশাহারা— তিনি উদাসীন, কেউ তাকে চায় না দেখে অপেক্ষা করে করে দোর থেকে চলে যান। কেউ গ্রাহও করে না । জগৎজোড়া বনফুলের মালা র্তার গলায় --অথচ— পুষ্পের চোখে জল এসে গেল গ্রহদেবের অপূর্ব কণ্ঠস্বরে। সে হাত জোড় করে বল্পে—প্ৰভু, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ? গ্রহদেব তখনও আত্মস্থ বিভোর অবস্থায় বলেই চলেচেন আগের কথার জের টেনে— —দেখ, তোমরা পুথিবীর ছেলেমেয়ে । আমি তোমাদের ভালবাসি, কারণ তোমাদের জন্মজন্মান্তর নিজের হাতে গড়ে তুলেচি। তার জ্যোতির্বাতায়ন অসীম শূন্তে খোলা রয়েচে, আশ্চর্যের বিষয় সেদিকে কেউ চায় না. সৰাই অন্ধ । নরক থেকে বাচাতে চাই, কিন্তু পারিনে।. অন্ধের মত ছুটে যায় সেদিকে। ওঁকে দেখ–উনি সত্যলোকেরও উধ্বতন স্তরের দেবী কিন্তু নিজের স্বখ চান না । o পৃথিবীর ছেলেমেয়েদের দুঃখে প্রাণ র্কাদে বলে কোনো উধ্বর্ণ লোকেই থাকতে পারেন না। উনি সৌরমণ্ডলের সমস্ত জগতের মা । তোমরা কি আমাদের দেখা পেতে ? আমাদের দেখার মত চোখ পেয়েচ শুধু ওঁর কৃপায় । নইলে ওঁর নিজের স্তবে উনি জন, মহ, তপ: লোকের জীবের অদৃশ্য। এখানে কোনো লোকের অধিবাসী তাদের উধ্বলোকের অধিবাসীকে দেখতে পায় না—দেখা সম্ভব নয়। ওই মেয়েটিকে ভালবাসেন বলে আজ