পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২২ বিভূতি-রচনাবলী লোক। ওতে ধারা বাস করেন তারা এবং তাদের বাসভূমি দুই-ই আমার কাছে সম্পূর্ণ অঙ্গ। অথচ আমি কতকাল ধরে শুধু ভ্ৰমণ করেই বেড়াচ্চি—কত যুগ যুগ এসেচি আত্মিক লোকে— আর তোমরা ছদিন এসেই— যতীন বিশ্বয়ে কেমন হয়ে গেল। এই মহান দেবতা—ইনিও ছোট ? তাহোলে তারা কোথায় আছে ? কীটন্ত কীট—তাই বুঝি অত অহংকার ? কিন্তু কি বিশাল, অনন্ত সময় এ ব্ৰহ্মাও—কত অসংখ্য জীবলোক, আত্মিক লোক, অনাদি, অনন্ত সময় ব্যেপে কি অনস্ত বিবর্তন ! তাদের সবারই ওপর সেই বিশ্বনিম্নস্তা। সত্যিই ভগবানের নাগাল কে পাবে ? তিনি কোথায় আর তারা কোথায় ! o যতীন বঙ্গে—আপনি শুধু ঘুরে ঘুরে বেড়ান কেন, দেব ? —কেন বলো তো ? —আজি আপনাকে যে চোখে দেখলাম—অনুগ্রহ করে কিছু মনে করবেন না তার—মানে —মানে— পুষ্পের ভ্ৰকুটি ওকে নির্বাক করে দিলে। দেবতা নিজেই বোধ হয় ওর মন বুঝে জবাব দিলেন। —এই ভ্রমণই আমার উপাসনা । কত সৌন্দর্য দেখেচি, কত ভয়ানক রূপ দেখেচি তার —যেমন তোমরা আজ দেখলে। এও কিছু নয়—এর চেয়ে অতি ভীষণ রূপ আছে স্বষ্টির । সে সব সহ করতে পারবে না তোমরা। আমি এর মধ্যেই তাকে দেখি । যতীনের চেয়ে পুষ্পের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা বেশি, সে বল্পে—প্রভু, আপনি তাকে দেখেচেন ? ওরা একটা অপরিচিত গ্রহের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, আকাশপথ থেকে তার বিচিত্র ধরনের গাছপালা, পাহাড়-পর্বত সব দেখা যাচ্ছিল। . গ্রহে তখন রাত্রি গভীর। লোকালয় বড় কম তাতে, কেবলই ভীষণ অরণ্যানীসমাচ্ছন্ন শৈলমালা ও উপত্যক । ওর একটা সাখী উপগ্ৰহ থেকে নীল জ্যোৎস্না পড়ে সে সব এমন একটা সৌন্দর্যে ভূষিত করেচে–পৃথিবীতে কেন, এ পর্যন্ত স্বৰ্গলোকেও সে রকমটা দেখেনি ওরা। অপার্থিব তো বটেই, অদৈবও বটে। বনে বনে নীল জ্যোৎস্না—মুগ্ধ হয়ে গেল ওরা সে গ্রহের গভীর রাত্রির নীলজ্যোৎস্বাক্ষাত গভীর উত্তঙ্গ শৈলারণ্যের রূপে । দেবতা বলেন—কি দেখচোঁ ? এ একটা জীবজগৎ । খুব উচু স্তরের জীব এতে বাস করে। চলো, এর বনের মধ্যে বসি । তোমাদের পরিচিত স্থূল জগৎ থেকে বহু জন্মের পর যখন লোকের মন তার দিকে যায়, তখন তারা এখানে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে ।. শুধু তোমাদের পৃথিবী থেকে নয় —ওই ধরনের আরও অনেক নিম্ন স্তরের স্কুল জগৎ থেকে। আত্মার সেই বিশেষ অবস্থা না হোলে এই সব গ্রহে আসা চলে না। এখানে কর্মবন্ধন কম । ভগবানে যারা আত্মসমর্পণ করেচে, তাদের মন বুঝে অন্তর্ষামী বিশ্ব-দেবতা এখানে-এবং আরও এর মত বহু গ্রহ আছে, সেই সব লোকে—জন্মগ্রহণ নির্দেশ করেন। দেখচো না এখানে জীবের বসতি কম । ভিড় নেই। জীবনের যুদ্ধ সরল ও সহজ। সব রকম ভ্ৰম, কুসংস্কার, অজ্ঞানতার স্বাধন যারা