পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>sb" বিভূতি-রচনাবলী g সারারাত যতীন ও পুষ্প আশার শিয়রে বসে রইল। পাশের একটা বাডীর খোলা জানালা দেখিয়ে বল্পে—দ্যাথো যতীনদা, ওখানে ওরা কি করচে ! দেখে এসে না ? —কি ? {\ —তুমি গিয়ে দেখে এসো, অমন জায়গায় যাবো না । দম বন্ধ হয়ে আসে। যতীনের কৌতুহল হোল, সে গিয়ে দেখলে, কয়েকটি ভদ্রলোক, সাজে পোশাকে বেশ অবস্থাপন্ন বলেই মনে হয় - একটি ঘরে বসে তাসের জুয়ো খেলচে । পাশের টেবিলে একটি বোতল, কয়েকটি মাস—এক টিন সিগারেট, দু-চারটি শূন্ত চায়ের কাপ ডিস—একটা বড় প্লেটে খানকতক অর্ধভুক্ত পরোটা ও অন্য একটা পাত্রে কিছু ডালমুট। সিগারেটের ছাই ও ডালমুট ঘরের মেজের দামী কাপেটের ওপর ছড়ানো—যদিও সিগারেটের ছাই ফেলবার পাত্র টেবিলের ওপর রয়েচে কিন্তু আধপোড়া সিগারেট আর সিগারেটের ছাইতে পাত্রটা বোঝাই । ওরা ছোট ছোট তাকিয়া পাশে রেখে একমনে খেলেই চলেচে । বিছানার পাশে রাশীরুত দশটাকার নোট একটার পর আর একটা হিসেবে সাজানো, ওপরে একটা পেপারওয়েটু চাপানো । ওরা মাঝে মাঝে বোতল থেকে ঢেলে মদ খাচ্চে, সিগারেট ধরাচ্চে, মাঝে মাঝে একখানা কাগজে পেন্সিল দিয়ে হারজিংস্থচক হিসেব রাখচে । এদের মধ্যে একজনের বয়স পঞ্চাশ উত্তীর্ণ হয়েচে, দেখলেই বোঝা যায়, মাথার চুলে কালে রং খুজে বের করা কঠিন । ফুলফোর্সে মাথার ওপর ইলেকটিক পাখা ঘুরচে, দেওয়ালের ঘড়িতে রাত দেড়টা বাজে । sts একজন ডেকে বল্লে-ও প্রমীলা,–টুকু—খাবার দিয়ে যাও । দু'তিনবার ডাকের পর একটি স্বন্দরী রমণী ঘুম-ঢুলুঢুলু চোখে একটা বড প্লেটে কতকগুলো কাটলেট নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে বল্লে--নাও সব—রাত কম হয়নি, আমার ঘুম পেয়েচে– কাল আবার হাসপাতালের ডিউটি সকাল থেকে শুরু – একজন বল্লে-সোডা ফুরিয়েচে–টুস্থ । লক্ষ্মীটি, একটা সোডা আমাদের যদি দিয়ে যাও — আর একজন বল্লে-অমনি ওই সঙ্গে গোটাকতক পান— স্বন্দরী মেয়েটি রূপে ঘর আলো করেচে, ওর পরনে দামী সিল্কের শাড়ী, কাজকরা ব্লাউজ, অনাবৃত কণ্ঠদেশ ও বক্ষঃস্থলে জড়োয়ার কাজ করা নেকলেস চিক্‌ চিক্‌ করচে । সে যেতে যেতে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কৌতুক-মিশ্রিত স্বরে বল্পে—পারবে না এত রাত্রে পান সাজতে বসতে— পঞ্চাশোধ্ব বয়সের সেই লোকটি কপট মিনতির স্বরে বল্লে—আমার দু’হাত বন্ধ, মুখের সিগারেটটা ধরিয়ে যদি দিয়ে যেতে টুকু— যতীন সেখানে আর দাড়ালো না । পুষ্পকে এসে বষ্ট্রে—তাস খেলচে । তাসের জুয়ো— টাকা জিত চে । পুষ্প বল্লে—একবার দেখে এসেচি জানালা দিয়ে। ওরা অবস্থাপন্ন ভদ্রলোক—দেখে মনে হয় টাকার ভাবনা নেই—অথচ টাকার এমন নেশা ? —তুমি এসব বুঝবে না পুষ্প । টাকার নেশা নয়, জুয়োর নেশা—