পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s? レ・ সে দেবতা। একমাত্র দেবতা, আর কেউ নেই । যিনি অশব্দ অম্পর্শ অব্যয় অরস ও অগন্ধ, অনাদি ও অনস্ত, তার অপূর্ব আবির্ভাবে নৈশ আকাশ যেন থম ধম করটে । ভবানী বাড়য্যে মুগ্ধ হয়ে ভাবেন, কোন মহাশিল্পীর স্বষ্টি এই অপরূপ শিল্প, এই শিশুও তার অন্তর্গত। এই বিপুল কাকলীপূর্ণ অপরাহে, নদীজলের স্নিগ্ধতায় শ্ৰীভগবান বিরাজ করছেন জলে স্থলে উর্ধ্বে অধে, দক্ষিণে উত্তরে, পশ্চিমে পূর্বে। যেখানে তিনি সেখানেই এমন স্বন্দর শিশু অনাবিল হাসি হাসে, অমন স্বন্দর বসন্তবেীরী পাখীর হলুদরঙের দেহের ঝলক ফুটে ওঠে।...র্তার বাইরে কি আছে ? জয় হোক তার।’ তিনিই আবার বলছেন— -- ‘কেবল থাকবেন তিনি। সমস্ত পরিবর্তনের মধ্যে অপরিবর্তনীয়, সমস্ত গতির মধ্য স্থিতিশীল তিনি। ঈশ্বর, ব্রহ্ম, জ্যোতিঃস্বরূপ, এ মানুষের মনগড়া কথা । সেই জিনিস যা এমন স্বন্দর অপরাহ্লে, ফুলে, ফলে, বসন্তে, লক্ষ লক্ষ জন্মমৃত্যুতে, আশায় স্নেহে, দয়ায় প্রেমে আবছায়া ধরা পড়ে, জগতের কোন ধর্মশাস্ত্রে সেই জিনিসের স্বরূপ কি তা বলতে পারে নি, তবু মনে হয় তিনি যত বড় হোন, আমাদের সগোত্র। আমার মনের সঙ্গে এই শিশুর মনের সঙ্গে সেই বিরাট মনের কোথায় যেন যোগ আছে । ভগবান যে আমাকে স্বষ্টি করেছেন শুধু তা নয়—আমি তার আত্মীয়—খুব আপন ও নিকটতম সম্পর্কের আত্মীয় । কোটি কোটি তারার দু্যতিতে ছাতিমান সে মুখের দিকে আমি নিঃসঙ্কোচে ও প্রেমের দৃষ্টিতে চেয়ে দেখবার অধিকার রাখি, কারণ তিনি যে আমার বাবা ।” জ্ঞানী ভবানী বাড়য্যের পক্ষে প্রেম-ভক্তিতে এর থেকে বেশী বিহ্বল হওয়া সম্ভব নয় । দেবযান প্রসঙ্গে ইছামতী'র উল্লেখ হয়ত একটু অবাস্তর হয়ে পড়ল, তবে এই দুই বইয়ের মধ্যে সামান্য একটু যোগসূত্রও আছে । আমার বিশ্বাস—‘দেবযান’ লেখার পরও লেখক নিশ্চিন্ত হতে পারেন নি, তার মনে হয়েছে যে সব কথা এখনও বলা হয় নি—তাই ইছামতী’র গ্রাম্য পৃষ্ঠপটে ভবানী বাড়য্যেকে তথা লেখকের মানসমূর্তিকে টেনে এনেছেন। এই খণ্ডে যে তিনটি গল্পগ্রন্থ স্থান পেয়েছে উপলখণ্ড’, ‘বিধু মাষ্টার’ ও ‘ছায়াছবি, তার মধ্যে ছায়াছৰি লেখকের মৃত্যুর পর প্রকাশিত। যে গরগুলি এদিক ওদিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছিল—যে’সম্বন্ধে তিনিও অতটা সচেতন ছিলেন না বোধহয়— সেইগুলিই প্রধানত তার মাষ্ট্ৰীয় ইমান চণ্ডীদাস চট্টোপাধ্যয়ের উদ্যমে সংগৃহীত ও ছায়াছবি নামে প্রকাশিত হয়। এর গল্পগুলির মধ্যে উল্লেখ্য এক মরফোলজী—বাকীগুলি পড়লে মনে হয় কিছুটা অবহেলায় অনাদরে লেখা—নিতাস্তই পত্রিকা-সম্পাদকদের কড়া তাগিদে, সমস্লাভাবের মধ্যে দ্রুত লিখতে হয়েছে। এক আধটি গল্পে- যেমন 'অভয়ের অনিদ্রা'-ৰ্তার বৈশিষ্ট্য বা মুদ্রাদোষগুলিরও চিহ্ন দেখা যায় না।