পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ye★ বিভূতি-রচনাবলী নির্জনে বসে ভগবানের চিন্তা ও ধ্যান করি । রঘুনাথদাসের আশ্রমের মত এর পুণ্যময় প্রভাব । মেয়েটি হঠাৎ বল্লে—সমুদ্র দেখবে ভাই ? পুষ্প অবাক হয়ে বঙ্গে—কোথায় ? —ওই দ্যাথো— পুপ সত্যই দেখলে, সেই বনবীথির ওপারে বিশাল স্বনীল মহাসাগর ঢেউএর ওপর ঢেউ তুলে বহুদূরে দিগন্তে মিশে গিয়েচে—কোনো কুল নেই, কিনারা নেই। তার অনন্ত জলরাশির ওপর নীল মহাব্যোমের প্রতিচ্ছায়া—সে এক অদ্ভুত দৃপ্ত, সমুদ্রতীরে এক শিলাখণ্ডে বিশাল বৃক্ষতলে মেয়েটি ওর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বসালে । পুষ্পের মনে হোল ওর সমস্ত সত্তা এই অনন্ত মহাসমূদ্রের কূলরেখা ধরে বহুদূর অনন্তে বিলীন হয়ে যাচ্চে, জগৎস্বপ্ন যেন লয় হয়ে যাচ্চে স্বসংবেঙ্ক আত্মাহুভূতির শাস্ত গভীরতায় । মেয়েটি খিল খিল করে হেসে উঠলো মুখে আচল দিয়ে। কি মধুর হাসি তার স্বন্দর মুখের। বঙ্গে—কেমন ঠকিয়েচি ভাই ? পুষ্প বল্লে-—সমূদ্র কোথা থেকে এল এখানে ? আমিও তাই ভাবচি - —সমুদ্রতীরে এই গাছতলায় বসলে র্তার কথা বড় মনে হয়—তাই তৈরি করে রেখেচি । —সব সময় থাকে ? —সব সময়। তবে অন্য কেউ আমার মনের ভূমিতে না পৌছলে দেখতে পায় না। আমার কাছে সর্বদাই সত্যি -অন্যের কাছে অবাস্তব । 锦 —এ গ্রামের অন্য লোকের কাছেও ? —আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না। তুমি ভাই ভালবাসবে বলে তোমাকে আমার ভূমিতে নিয়ে এসে দেখলাম। বলে ভালো ? —আপনাকে আমি কি বলে ধন্যবাদ দেবো জানিনে দেবী ; কত ভালো যে লাগচে এই বন, এই পাথরের বেদী, এই নীল সমুদ্ৰ—এখানে ভগবানের আসাযাওয়ার পায়ের চিহ্ন আছে । — আছেই তো। উনি যে আসেন লুকিয়ে আমার কাছে। জানো না ভাই ? মেয়েটির গলার স্বরে পুষ্পের মমতা জাগলো। শ্রদ্ধাও । এই শিলাস্তৃত সমুদ্রবেলায় দেবতার শুভঙ্কর আবির্ভাবের কথা লেখা রয়েচে । পুতুলখেলা হয়তো। হোকু পুতুলখেলা। সে নারী, এই তার ভাল লাগে । সে হঠাৎ একটা প্রশ্ন করলে—আচ্ছা, একটা কথা বলুন । মেয়ের কি খারাপ ? পৃথিবীতে কেন একথা সাধু মহাজন বলে এসেচেন ? —মেয়েরা সাধনপথের বিঘ্ন, তাই । — কেন ? —বিভ্রান্ত করে দেয় পুরুষের মন । প্রকৃতির কাজ করবার জন্যে মায়া স্বষ্টি করে । পুরুষেরা মজে অতি সহজেই। সখি, তোমার এই মুখখানি নিয়ে এই মহর্লোকেই একবার পরীক্ষা করে স্তাখো না ? —সত্যি আমরা কি এতই হেয় ?