পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ১৩৯ — হেয় বা খারাপ এমনি হয়তে কিছু না, বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া। যে ভগবানকে পেতে চায়, যে জ্ঞানের সাধনা করতে চায়, ভক্তির সাধনা করতে চায় -সে নারী থেকে দূরে থাকবে, এই বিধান। অন্ত লোকে যত খুশি মিশুক -কে বারণ করচে ? সাধনার পথের পথিক যারা নয় তাদের কি বাধা আছে নারীসঙ্গের ? নারী প্রেমের সাধিক হয় অতি সহজে, পুরুষে তা পারে না । নারী পাপের পথেও নিয়ে যায়, কল্যাণের পথেও নিয়ে যায় । কারণ, চিত্তনদী উভয়তোমুখী, বহতি পাপায়, বহুতি কল্যাণায় । খুব সাবধানে না চললে সর্বনাশ আসে ওদের থেকে । সাপ খেলাতে সবাই জানে না। আনাড়ী সাপুড়ে সাপের হাতে মরে । — স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধ কি চিরকালের ? —যেখানে প্রেম থাকে। নয়তে কিসের সম্বন্ধ ? যেখানে প্রেম আছে, প্রেমের দেবী মিলিয়ে দেন। স্বামী-স্ত্রী না হোলেই বা কি । প্রেম নিয়ে বিষয়—কিন্তু এ ধরনের প্রেম সাধনীলন্ধ বস্তু। দেহের বা রূপের মোহ এ প্রেমের জন্ম দিতে পারে না। রূপজ প্রেম দিয়ে প্রকৃতি তার কাজ করিয়ে নের মাত্র । —আপনি কি করে এসৰ জানলেন ? মেয়েটি হেসে বল্লে—ক’ত যে ঠকেচি ভাই কত শত জন্ম ধরে । কত নেমে গিয়েছিলাম, কত ভুগেছিলাম—জন্ম-জন্মান্তরের সে সব স্মৃতি ও সংস্কার আমাকে জ্ঞানী করেচে। একজন্মে দুজন্মে সাধু হওয়া যায় না ভাই-মহলোকেও আসা যায় না। —আবার আপনি জন্মাবেন ? —পৃথিবীতে আমার শেষ জন্ম হয় বহুকাল আগে—পৃথিবীর সে হিসেব ভুলে গিয়েচি । আর সেখানে যাবো না । ভগবান আমায় দয়া করেচেন । —যদি আপনার মত মেয়ের দরকার হয় পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার ? —সে অবস্থায় ভগবানের নির্দেশ পাবো । জীবের সেবা করবার ভার—সৌভাগ্যের কথা সে । তিনি যদি আমায় না ছাড়েন ভাই, নরকে যেতেই বা কি ? উনি হাত ধরে নিয়ে গেলে নরক আর বলি কোথায় । কিসের স্বৰ্গ কিসের নরক ? থাকুন তো উনি আমার সঙ্গে"। মেয়েটির চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো দর-দর ধারে । পুষ্প অবাক হোল ওঁর অনুভূতির তীব্রতায় । শ্রদ্ধায় ভক্তিতে ভরে উঠলো তার মন । মেয়েটি আবার বল্লে --ভগবান এই আলোর কমল বিশ্বজগৎ হয়ে ফুটে আছেন। তার করুণার আলো। কাউকে তিনি ভোলেননা, অবহেলা করেন না ভাই--র্তার মত প্রেমিক কে ? যে ডাকে, যে তার শরণ নেয়, তিনি তারই দোরে ছুটে যান, পাপী-পতিত মানেন না । কিন্তু ভাই, কেউ কি তাকে চায় ? সমুদ্রতীরের বিশাল বৃক্ষতলে নীল উৰ্মিমালার দিকে চেয়ে ওরা দুজন দাড়িয়ে । মেয়েটি স্বন্দর ভঙ্গিতে হাত তুলে দূরে দেখিয়ে বল্পে—ওই মহাসমুদ্রের মত অন্তহীন তার করুণা ! কেউ বুঝতে পারে না, বলে তাকে নিষ্ঠুর। তিনি দু'তিন জন্মের মঙ্গল করেন একজন্মের কর্মক্ষয় করে। পৃথিবীর লোকে সন্ত সম্ভ ফল চায়। বোঝে ন তিনি কি করতে চাইচেন। ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে