পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 বিভূতি-রচনাবলী কোনো তত্ত্বে দরকার কি । ভক্তির চোখে ভাবের চোখে দেখতে শেখো ভগবানকে । তার ঐশ্বৰ্ষ ভুলে যাও । তাকে বন্ধু ভাবো পুত্র ভাবে পতি ভাবো—এমন কি দাস ভাবো । পুপ বিস্মিত হয়ে ৰল্লে--দাস ভাববো ? কি বলেন ঠাকুর ! রঘুনাথ চীৎকার করে বল্পেন—কেন ভাববে না ? দাবি করে ভাবো। প্রেমের সঙ্গে দাবি করে ভাবো । তিনি ভক্তের দাসত্ব করেচেন—করেন নি ? তিনি যে প্রেমের কাঙাল—তাকে যেভাবেই ডাকো, ডাকলেই সাড়া দেবেন । তবে প্রেমের সঙ্গে ডাকা চাই । ভয় করে ডেকো না। ভয় করবার কিছু নেই তাকে । পুষ্প মেয়েমানুষ, এ সব কথায় ওর চোখ দিয়ে দরদর ধারে জল গড়িয়ে পড়লো। যুক্ত করে নমস্কার করে বল্লে—আপনার আশীৰ্বাদ, ঠাকুর । নরকে এ কথা বল্লেন, নরক যে পুণ্যস্থান হয়ে উঠলো ! এমন সময় পুষ্প দেখতে পেলে আশাকে । একটা কালো পাথরের অন্তর্বর টিলার ওপর সে মলিনমুখে চুপ করে বসে আছে। જ রঘুনাথদাস বল্লেন--তুমি যাও মা। আমি এখানে থাকি । —কিন্তু আমাকে যে ও দেখতে পাবে না ? —পাবে, যাও । কিন্তু একটা কথা মা— —কি ? —ওই কস্তাটিৱ এখনও জ্ঞান হয়নি । পুপ বিম্মিত হয়ে বল্লে-সে কি প্ৰভু ! ও তো দিব্যি জেগেই বসে আছে। —ও মেয়েটি ধুম্ৰযান দক্ষিণমার্গের পথিক । ওর গতির পথ বেঁকে আছে ধন্থকের মত পৃথিবীর দিকে। তুমি দেখতে পাচ্চ না মা ! ও অল্পদিন হোল পৃথিবী থেকে এসেচে–তার ওপর স্বাভাবিক নিয়মে মৃত্যু হয়নি। আত্মহত্যা করেচে। ওর মৃত্যু সম্বন্ধে ধারণাই হয়নি। যাও, কাছে গিয়ে বুঝতে পারবে । পুপ কাছে যেতেই আশা বল্লে-তুমি আবার কে গো? হ্যাগে, এটা কি আলিপুরের বাগান ? - পুষ্প-সস্নেহে বল্পে-কেন বৌদি ? এটা কি বলে মনে হচ্চে ? —বাড়ীওয়ালী মাস বলেছিল আলিপুরের বাগান দেখাতে নিয়ে যাবে। সেখানে একটি কোন বাবুর সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দেবে। আমি বলি, ছিছি, কি ঘেন্না, বলি—নেত্যদার সঙ্গে চলে এসেছিলাম সে আলাদা কথা। অল্প বয়েসে বিধবা হয়েছিলাম, কে খেতে পরতে দেয় সংসারে •••না হ্যা, সত্যি কথা বোলবো। মা বুড়ো হয়েচেন, তার ঘাড়ে আমার আর একটি বিধবা দিদি --আচ্ছ, মাহেশের রথতল। এখান থেকে কত দূর ? তুমি কে ? পুপ ওর পাশে গিয়ে বসলো। ওর দিকে সস্নেহ দৃষ্টিতে চেয়ে বল্লে—আমি তোমাকে চিনি । তুমি আমার বৌদিদি হও ।