পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ© Ꮼ বিভূতি-রচনাবলী এখানে জন্মেছিলাম । —তুই মরে গিয়েছিলি আমার আগে—রাগ করিস্নি বলচি বলে। —আমার মনে পড়েচে । —গত জন্মেও তাই । এই রকমই হচ্চে জন্মে জন্মে। তুই মারা যাচ্চিপ, আমি তোর পেছনে যাচ্চি। কিন্তু আর একটি মেয়ের কথা বড় মনে পড়চে । তাতে আমাতে কিছুদিন এখানে ছিলাম। তারপর সেও কোথায় গেল চলে । ওরা বাইরে এল । করুণাদেবী বল্লেন—মনে পড়লে ? কিন্তু এ যে অদ্ভুত মনে পড়া । কত নিবিড় বর্ষারাতের টপ টপ জলপতনের সঙ্গে, কত বসন্তের প্রথম রোদে পোড়া মাটির গন্ধের সঙ্গে জীবনের মস্ত বড় যাত্রাপথ একমুরে বাধা, আনন্দের নিবিড় স্মৃতি সেখানে বেদনার সঙ্গে এক হয়ে গিয়েচে–গভীর বেদন, যা শুধু জন্মজন্মান্তরের হারানো প্রিয়জনের বার্তা বহন করে আনে অন্তরতম অস্তরে। মনে হয়, সবই কি তবে মিথ্যে, সবই স্বপ্ন ? যতীনের দিশেহারা বিষন্ন দৃষ্টিতে ওর মনের কথা পরিস্ফুট হোল। করুণাদেবী বল্লেন ওই জন্যে তোমাদের এনেচি। এখানে তোমাদের ঠিক এবারকার জন্মের আগের জন্মভূমি। পুষ্প বল্পে – এ কোন গ্রাম দেবী ? নাম মনে নেই । . —ত্রিবেণী । গঙ্গার তীরে। ঐ গঙ্গা– —ত হোলে গত দুই জন্মে আমরা কাছাকাছিই ছিলাম, গঙ্গারই ধারে । এবার তো হালিসহরের এ পার সাগঞ্জ-কেওটায় । —স্থানের আকর্ষণ অনেক সময় এমন হয় যে গত জন্মের ভূমিতে কোনো না কোনো সময় আসতেই হবে। তবে জন্মান্তরীণ স্বতি সব আত্মার থাকে না পৃথিবীর স্কুল দেহে । কখনো কেউ জাতিস্মর হয় । জাতিস্মর হওয়া উচ্চ অবস্থার লক্ষণ । যতীন এতক্ষণ চুপ করে ছিল । তার মন ভাল নেই। জগৎ ও জীবন দেখচি সব ভেলকির মত। কোনটা সত্যি ? কোনটা মিথ্যে? বাজে জিনিস সব । বাচা মরা কিছুরই মধ্যে কিছু নেই। কেন এ বিড়ম্বনা ? সে জিজ্ঞেস করলে—দেবী, এরা আমার কে ? এখন যারা আছে ? .—তোমার পৌত্রের পৌত্র । —আর পুষ্পের ? —পুষ্প অবিবাহিত অবস্থায় মারা যায়। আশা এ বাড়ীতে তোমার প্রথম স্ত্রী ছিল। সে অল্পবয়সে তোমায় ছেড়ে চলে যায় এবারের মত। আমিই তোমাদের মিলিয়ে দিয়েছিলুম তিনজনকে আবার এ জন্মে। কিন্তু কর্মের ফল আমি খণ্ডন করতে পারিনি তোমাদের–চেষ্টা করলাম, কিন্তু কৰ্মশক্তি নিজের পথ ধরল ঠিক । যতীন হতাশ স্বরে বল্লে—আপনি যখন পারলেন না, তখন আর কি উপায় দেবী । আপনি স্বয়ং যখন—