পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবধান SbrS কথাবার্তা বল্পে স্বামীর সঙ্গে। কি অদ্ভূত আনন্দে দিনটা কেটেছিল—যত অল্প সময়ের জন্তেই দেখা হোক না কেন । নাঃ—কোথায় কি যে সব হয়ে গেল ওলটপলেট । সংসার গেল ভেঙে ! সে হোল অল্পবয়সে বিধবা । কত আশার স্বপ্ন দেখেছিল সে বিয়ের রাত্রে—সব মেয়েই দেখে । কেন তার ভাগ্যে এমন হোল ! এই এক জায়গা—এমন ভয়ঙ্কর স্থান সে কখনো দেখেনি । মাঝে মাঝে ওর চারিধারে অন্ধকার ঘিরে আসে, মাঝে মাঝে আলো হয় । গাছ নেই পালা নেই—পাথর আর বালি। চারিধারে উচু উচু পাথরের ঢিবিমত । যতদুর যাও, কেবল এমনি । মাহুষ নেই, জন নেই। মাঝে মাঝে কিন্তু অতি বিকট আকারের দু-একজন লোক দেখা যায় । অসহায় স্ত্রীলোককে একা পেয়ে তাদের মধ্যে দুবার দুজন আক্রমণ করতে ছুটে এসেছিল। একবার কে এক দেবী ( কোথা থেকে এসেছিলেন, তার নাম পুপ—বৌদিদি বলে ডেকেছিলেন তার মত সামান্ত মেয়েকে ) তাকে উদ্ধার করেন। আর একবার কেউ রক্ষা করতে আসেনি-একা ছুটতে ছুটতে সে এক পাহাড়ের গুহায় ঢুকে গেল। আশ্চর্যের বিষয়, যে তার পিছু পিছু ছুটে আসছিল —সে তাকে আর খুজে পেলে না । গৃহস্থের মেয়ে, গৃহস্থঘরের ৰেী—এ কি উৎপাত তার জীবনে । কি জানি, সেদিন শ্বশুরবাড়ীতে কি ভাবে যে সে স্বামীকে দেখেছিল সেই থেকে তার মন অন্যরকম হয়ে গিয়েচে । কেবলই সাধ হয় আবার সেই শ্বশুরবাড়ীর ভাঙা কোঠার ঘরে সে তার ছোট সংসার পাতবে, বাশবাগানের দিকের রান্নাঘরটিতে বসে বসে কত কি রান্না করবে। ডাল, মোচার ঘণ্ট, স্বত্তানি (উনি স্বক্তানি বড় ভালবাসেন ), কই মাছের ঝোল মানকচু দিয়ে... উনি এসে বলবেন—কি গো বে, রান্না কি হয়ে গেল ? —এসো-হয়েচে । হাত পা ধুয়ে নাও—জল গরম করে রেখেচি। বডড শীত আজ । মাটির প্রদীপ জলচে রান্নাঘরের মেজেতে কাঠের পিলস্কজে। তালপাতার চেটাই পেতে স্বামীকে আশা বসতে দিলে। মুখ দেখে মনে হোল উনি খুব ক্ষুধার্ত –হঁ্যাগা, একটু চা করে দেবো ? —তা দাও, বডডই শীত । இ. —কাপগুলো সব ভেঙে ফেলেচে খোকা । কাসার গেলাসে খাও-ওবেলা দুটো কাপ কিনে নিয়ে এসে না গা কুডুলের বাজার থেকে "চা খেতে খেতে উনি কত রকম মজার গল্প করচেন। সে বসে বসে শুনচে একমনে। স্বন্দর দিনগুলি স্বপ্নের মত নেমেছিল তার জীবনে । আনন্দ.অফুরন্ত আনন্দ...লে সতী, পৰিত্ৰ, সাধী। স্বামী ছাড়া কাউকে জানে না। হঠাৎ আশা চমকে উঠলো। সে কার মুখের দিয়ে চেয়ে আছে ? কে তার সামনে বলে চা খেতে খেতে গল্প করচে ? তার স্বামী নয়—এ তো নেত্যনারাণ ! কুডুলে বিনোদপুরের বাড়ী নয়—এ কলকাতার মানিকতলার সেই বাড়াউলি মালীর বাড়ী, সেই রান্নাঘর, তাদের ছোট কুঠুরিটার সামনে ফালিমত রান্নাঘরটা। ওই তো রান্নাঘরে, তার হাতে তৈরী সেই দড়ির শিকে, হাড়িকুড়ি ঝুলিয়ে রাখবার জুন্তে সে নিজের হাতে ওটা বুনেছিল মনে আছে। ওই তো