পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী טא"של পারবে না । সে অমর। অনন্ত কাল ধরে সে মাথা কুটলেও মরবে না । নেত্যনারাণ তাৰে হাত ধরে ওঠাতে লাগলো। বলতে লাগলো—কি পাগলামি করে, ক্ষেপলে নাকি ? চলো শুই গিয়ে – সন্ধ্যাবেলা উকুনে আঁচ দিয়েচে ঘরে ঘরে । নেত্যনারাণ বাড়ী নেই, কোথায় গিয়েচে । ও এসে বাড়ীউলি মাসীর দরজায় দাড়ালো । কোথায় সে পালাবে তাই ভাবচে । এ কি ভয়ানক নাগপাশের বন্ধনে তাকে পড়তে হয়েচে । আর সে এ বাড়ীতে থাকতে পারবে না। ঐ ঘরে কত রাত্রে কুলবধুর জীবন কলঙ্কিত হয়েচে । তারপর ঐ ঘরের ঐ তক্তপোশে বিষ খেয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তার সে শোচনীয় মৃত্যু ! আবার সে বেরিয়ে পড়লো । এই কলকাতা শহরের সর্বত্র তার স্মৃতির বিষ ছড়ানো । কালীঘাট ? কালীঘাটে কি করে যাবে, নেত্যদা সেখানেও একবার তাকে নিয়ে গিয়ে সেখানে বিষ ছড়িয়ে এসেচে। আবার সে ছুটে চলে যাবে কুডুলে-বিনোদপুরে স্বামীর ঘরে । সেখানে যেতে পারলে সে বঁাচে । কিন্তু একদিন কেমন করে হঠাৎ গিয়ে পড়েছিল-—সেইদিন গিয়ে ওঁর সঙ্গে দেখাও হয়েছিল । কিন্তু সেখানে যাবার পথ সে জানে না । চিনে আজ আর যেতে পারবে না । ভুলে গিয়েচে সে পথটা । তার এক সইএর বাড়ী আছে স্ববর্ণপুরে । সেখানকার রজনী ডাক্তারের মেয়ে। কুমারীজীবনের বন্ধু। রজনী ডাক্তারের বাড়ীর পাশে ছিল ওর বড়দিদির শ্বশুরবাড়ী, যে বড়দিদি বিধবা হয়ে ইদানীং ওদের সংসারে ছিলেন । জামাইবাবুর সঙ্গে একবার দিদির ওখানে বেড়াতে গিয়ে স্ববর্ণপুরে রজনী ডাক্তারের মেয়ে বীণার সঙ্গে আলাপ হয় । তাদের কাটালতলায় দুর্গাপিড়ি পাতা দেখে আশা বলতে- ভাই সই, কাটালতলায় দুর্গ পি’ড়ি কেন ? বীণা বলতে-—দুর্গাপিড়ি ঘরে তুলতে নেই আমাদের । বাপঠাকুরদার আমল থেকে কাটলতলাতেই থাকে-- সইএর বিয়ে হয়েছিল কাচরাপাড়ার কাছে বাগ বলে গ্রামে । বাগের দত্তদের বাড়ী, তারা ওখানকার নাম-করা জমিদার। সই যদি তাকে আশ্রয় দেয়, সেই পবিত্র কুমারী-জীবনে সে লুকুতে পারে। কলকাতার বাড়াউলি মাসৗর বাড়ী থেকে সে চলে যাবে সোজা—স্ববর্ণপুর গ্রামের সেই কাটালতলায়, যেখানে সইদের দুর্গাপিড়ি পাতা থাকে সারা বছর। উনুনের আঁচের ধোঁয়ায় অন্ধকারে অস্পষ্ট সিড়ির পথ বেয়ে সে নেমে এল রাস্তায় । কি জানি কেন, বাড়ীট থেকে সামান্য একটু দূরে চলে এলেও ও নিজেকে পবিত্র মনে করে। মনের সব গ্লানি কেটে যায়...সে নির্মল, শুদ্ধ, অপাপবিদ্ধ আত্মা এতটুকু পাপের বা মলিনতার ছোয়াচ লাগেনি তার সারা দেহমনে । হঠাৎ কেমন করে সে রজনী ডাক্তারের কোঠাবাড়ীটার উঠোনে নিজেকে দেখতে পেলে । সেই কাটালতলায় । —ও সই !