পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& e o বিভূতি-রচনাবলী থোকার শিয়রে এসে বল্পে –খোকা ঘুমুল পাড়া জুড়াল, ঘুমোও যতুঙ্গা, ঘুমোও-দুষ্ট,মি করলে মায়ের হাতের চড় মনে আছে তো ? অভয় ঘুমিয়ে পড়লে, হয়তো এক একদিন কোনো রূপসী দেবীর স্বপ্ন দেখে, মায়ের মত ক্ষেহে তার শিয়রে বসে ঘুম পাড়াচ্চে। মায়ের মতই বলে মনে হয় তাকে । নৈশ আকাশ দিয়ে তারপর পুপ উড়ে চলে যায় তার নিজ লোকে ৷ অগণ্য জ্যোতির্মগুল, অগণ্য ব্রহ্মাও মহাব্যোমে সর্বত্র ছড়িয়ে,—অগণ্য জীবকুল, অগণ্য জীবনমৃত্যুর প্রবাহ। পুষ্পের মন বলে ওঠে—কোথায় আছ হে কারণার্ণবশাস্ত্রী মহাবিষ্ণু, মহাদেবতা, মুখের আবরণ অপসারণ কর—অপাৰ্বণু, অপাৰ্বণু, আমরা তোমার স্বরূপ দেখি– ধন্য কর আমাদের জন্মমরণ, দয়ালু দেবতা । স্বর্গ ও মর্ত্যের সেই মোহনায় পুষ্প এসে দাড়ালে । ওর কিছুদূরে নীল শূন্যে আগুনের লেখা একে বিরাট এক ধুমকেতু অগ্নিপুচ্ছ দুলিয়ে নিজের গে-ভরে চলে গেল।—সে মুহূর্তের হিসেব নেই। ওদের পায়ের তলায় কোন গ্রহের এক নদীতীর, হয়তো বা পৃথিবীরই – শান্ত অপরাহ, একদল সাদা বক মেঘের কোলে কোলে উড়চে নলখাগড়া বনের উধের আকাশে । আজ পুষ্প যেন দেখতে পেলে সেই দেবতাকে-নক্ষত্ৰজ্যোৎস্নায় ভাসানো এই অপূর্ব জীবনউল্লাসের স্রোতে সে জন্ম থেকে জন্মান্তরে ভেসে চলেচে যে মহাদেবতার ইঙ্গিতে । কোথায় যেন তিনি মহামুপ্তিময়, তার অপূর্ব স্বন্দর মুখখানি, স্বন্দর চোখ দুটি ঘুমে অচেতন । কি স্বন্দর দেখাচ্চে সেই স্বপ্লালসনিৰ্মীলিত আয়ত চোখ দুটি । পুষ্প বল্লে—উনি উঠবেন কখন ? চরণ বন্দনা করি । পুষ্পের মনের মধ্যে থেকেই প্রশ্নের উত্তর এল—উনি ওঠেন না। অনন্ত শয্যায় অনস্থ নিদ্রায় মগ্ন উনি। এক এক নিঃশ্বাসে যুগযুগান্ত কেটে যায়। তুমি ওঁর চরণ বন্দনা করবে ? ওঁর উপাসনা হয় না। কে করতে পারে ওঁর উপাসনা ? উনি কাউকে দেখেন না, কারে উপাসনা গ্রহণ করেন না। বিশ্বজগৎ ওঁর স্বপ্ন—উনি ঘুম ভেঙে জেগে উঠলে জগৎস্বপ্ন লয় হয়ে যাবে যে ! স্বষ্টি অন্তহিত হবে । কিন্তু তা হয় না—স্বষ্টিও অনন্ত, ওঁর স্বপ্তিও অনন্ত । উনিই বিশ্বের আদি কারণ—সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম। ক্ষীরোদশয়নশাস্ত্রী মহাদেবতা ব্রহ্মাণ্ডের । তুমি আমি, স্বর্গ নরক, জন্ম মরণ, দেব দেবী, ঈশ্বর, পাপ পুণ্য, দেশ ও কাল—সবই তার স্বপ্ন । সব তিনি। তিনি ছাড়া আর কিছু নেই—কে কার উপাসনা করবে ? ওঁর স্বপ্ন ছাড়া আর উনি ছাড়া আর কি আছে ? ভক্তিভরে প্রণাম করলে পুষ্প। উপাসনা হয় না তো হয় না। ঘন ঘুমে অচেতন সেই দেবদেবের স্বন্দর চোখ ছটি, স্বর্গ ও মর্ত্যের দূরতম প্রাস্তে, শুকতারার অস্তপথে, ছায়াছবির মত মিলিয়ে গেল । ታ