পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বিভূতি-রচনাবলী কিন্তু আমার পক্ষে চেনা সম্ভব নয়, আমার বাল্যকালে কে এ গ্রামে করাতের কাজ করতো ত৷ আমার মনে থাকবার কথা নয় । বল্লাম-তোমার ছেলে আছে ? -কেউ নেই বাবা, কেউ নেই। এক নাতজামাই আছে তো সে মোরে ভাত দেয় না । ওই আমার নাতনীকে রেখে মোর মেয়ে মারা যায় । আমার বডড কষ্ট, ভাত জোটে না সবদিন । বাজারে যাচ্ছি তিন পয়সার মুন কিনে আনবো—দুটো কটা চাল যোগাড় করিচি ও-বেলা । বুড়ীকে পকেট থেকে কিছু পয়সা বার করে দিলাম। ব্যাপারটা এখানেই চুকে যাবে ভেবেছিলাম, কিন্তু তা চুকলে না—উপরন্তু এই বুড়ীকে কেন্দ্র করে আমার জীবনে এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতার শুরু হলো। নিজের জীবনে না ঘটলে বিশ্বাস করতাম না এমন ঘটনা । পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙে উঠেচি, এমন সময় কালকার সেই বুড়ী লাঠি ঠুক্‌ ঠুক্ত করতে এসে হাজির উঠোনে। থাকি এক জ্ঞাতি খুড়োর বাড়ী। তিনি বল্পেন-ও হলো জমির করাতীর স্ত্রী—অনেকদিন মরে গিয়েচে জমির । তোমাদের খুব ছেলেবেলায় । ৰুড়ী উঠোনে দাড়িয়ে ডাকলে—ও বাবা— সে বোধ হয় চোখে একটু কম দেখে । ৪ বয়েসে সেট। অবশ্ব তেমন আশ্চর্ধই বা কি । বল্লাম-এই যে আমি এখানে । g —কাল পয়সা কটা পেয়ে ভাবলাম যাই দিনি বাওনপাড়ার দিকি । কে পয়সা দিলে চিনতেও পারলাম না । বিকেলবেলা চোখে ঠাওর পাইনে । ● আমার খুড়োমশায় বুড়ীকে বুঝিয়ে দিলেন আমি কে । সে উঠানের কাঠালতলায় বসে আপন মনে খুব খানিকট বকে উঠে গেল । তার যাবার সময় আরও দু-একটা পয়সা দিলাম। পরদিন কলকাতা চলে গেলাম, ছুটি ফুরিয়ে গেল। আমার জ্ঞাতি খুড়োকে কিছু টাকা দিয়ে এলাম আসবার সময়ে, আমার জন্তে ছোটখাটো দেখে একটি খড়ের ঘর তুলে রাখবার জন্তে । কয়েক মাস পরে জ্যৈষ্ঠ মাসে গরমের ছুটিতে আমার সেই নতুন-তৈরী খড়ের ঘরখানাতে এসে উঠলাম। কলকাতাতে কর্মব্যস্ত এই ক’মাসের মধ্যে বুড়ীকে একবার মনেও পড়েনি বা এখানে এসেও মনে হঠাৎ হয়তো হতো না, যদি সে তার পরের দিনই সকালে আমার ঘরের নিচু দাওয়ায় এসে না বসে পড়তে । বল্লাম-কি বুড়ী, ভাল আছো ? ময়লা ছেড়া কাপড়ের প্রান্ত থেকে গোটাকতক আম খুলে আমার সামনে মাটিতে রেখে বরে- আমার কি মরণ আছে রে বাবা ! জিজ্ঞেস করলাম-ও আম.কিসের ? ক্ষহীন মুখে একটু হ্ৰাসবার চেষ্টা করে বল্পে—জ গোপাল আমার, তোর জঙ্কি নিয়ে