পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>● বিভূতি-রচনাবলী মেয়েমানুষের সঙ্গে তর্ক করে কোনও লাভ নেই । গোপীকৃষ্ণবাৰু চুপ করে গুয়ে পড়লেন ।

  • পরদিন আবার আপিস থেকে ফেরবার পথে তিনি গেলেন শম্ভু ডাক্তারের ওখানে। চাপানের পর আবার দুজনে নিবিড পরামর্শ শুরু । কত টাকা সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়, তার একটা নিট হিসেব করে ফেলতে হবে । শম্ভু ডাক্তার বলেন–জাত সাণ্ডেল কাল এসেছিল তুমি যাওয়ার পরে। তার মুখে শুনলাম পথে নিমিয়াঘাট বলে একটা স্টেশনে নেমে পরেশনাথ পাহাড়ে ওঠা যায়। চলো না কেন এক ঢিলে দুই পাখী মারা যাক ।

—পরেশনাথ পাহাড় ? —হঁ্য । হাইয়েস্ট হিল অন দি বেঙ্গল প্লেন । সেটা দেখা— —হঁ্য, ই্যা-খুব ভাল । তাই যাওয়া স্বাবে । —টাকাটার হিসেব ধরে এবার । যাতায়াতে ধরো—রেলভাড়া, খোরাকী-- –টুকিটাকি জিনিসপত্তর কেলা— 會發 —কিনতে গেলে হাতী কেনা যায়—জিনিস কেনা বাদ স্থাও। শুধু নিট খরচ যেটা— এইভাবে সেদিনও কেটে গেল। পরদিন আবার পরামর্শ সভা বসে। এদিন কথা ওঠে কি কি জিনিস সঙ্গে নেওয়া যাবে । মশারি নেওয়া যাবে কি না তর্কের সেদিন কোনও মীমাংসা হলো না। শম্ভু ডাক্তার বলেন—যেখানেই ঘাও মশা থাক না থাক মশারি সঙ্গে থাকাই ভাল। মশা কামডালেই ম্যালেরিয়া হয়, ফাইলেরিয়া হয়, আরও কত কি । মশারি নেওয়াটা এসেনশিয়াল। গোপীবাবুর মতে অতদূর পশ্চিমে পাহাডের দেশে মশা-ফশা নেই— এ কি আর বাংলাদেশের খানাডোবাভরা পাড়াগ ? মিছিমিছি ভারবোঝা বাড়ানো। ট্রাভেল লাইট । একগাদা বেঁাচকা-বুচকি ঘাড়ে করে বেড়ানোর কোনও মানে হয় না । রাত দশটা। দুই বন্ধু সভা ভঙ্গ করে সেদিনের মত যে যার বাড়ী চলে গেলেন । আবার পরদিন দুজনে মিললেন। আজকার তর্কের বিষয় খাবার জিনিস কি-কি সঙ্গে নেওয়া যাবে। বাড়ীতে লুচি-পরোটা করে নেওয়াই ভাল। খাওয়ার জিনিসের আগুন দর। এক টাকার খাবার খেলে পেট ভরে না । কি কি খাবার নেওয়া যায় ? লুচি না পরোটা ? আলুর তুরকারি নেওয়ার দরকার নেই, বড় দাম আলুর। কুমড়োর ছোক আর কচুর ঘন্ট দিব্যি তরকারি । আরও কয়েক দিন এইভাবে কাটাবার পরে পূজো নিকটে এসে পড়লো। গোপীকৃষ্ণবাবুর মনে আনন্দ আর ধরে না । স্ত্রীকে বললেন—সব ঠিক যেন থাকে। ছোট মশারিট সেলাই করে দাও । আর একটা ছোট ঘটী— দিন পাতেক পরে পূজোর ছুটি হবে । গোপীকৃষ্ণবাবুর ডাক পড়লো একদিন বড়বাৰুর স্বরে। বড়বাৰু বললেন-একটা কথা বলি। পূজোর বোনাসের লিস্ট হয়েছে, তাতে কিন্তু আপনার নাম নেই।