পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী وا۔ দিদির শ্বশুরবাড়ী বারাসতে । তারা অনেকদিন থেকে নিয়ে যাৰে নিয়ে যাবে করছিল, তা আমি বলি যাক বাপু দুদিন একটু বেড়িয়ে আম্বক। জীবনে তো তার মুখের সীমে নেই। যতীন ভীষণ নিরাশ হোল। সে যে কত কি মনে ভেবে এসেচে, আশাকে বলবে - চল আশা, যা হবার তা হয়ে গিয়েচে—ঘরের লক্ষ্মী ঘরে চলো। কাকে নিয়ে কাটাই বলে তো তুমি যদি এমন করে থাকবে ? তারপর শাশুড়ীকে জিজ্ঞেস করলে—কবে আসবে ? —আসা-আসির এখন ঠিক নেই। এ মাসে তো নয়ষ্ট, পুজোর সময় পর্যন্তও থাকতে পারে । এখানে রধধবার লোক নেই, বুড়োমাহষ এতগুলো লোকের ভাতজল কচি দুবেলা, প্রাণ বৈরিয়ে গেল । শেষের কথাটি যে তাকে চলে যাবার ইঙ্গিত, যতীনের তা বুঝতে দেরি হোল না । বিকেলের দিকেই সে ভগ্নমনে বাড়ীর দিকে রওনা হোল । পথে তার খুড়তুতো শালী আল্লা, দশ বছরের মেয়ে, অশখ-তলায় দাড়িয়ে ছিল । ওকে দেখে কাছে এসে বল্পে-দাদাবাবু, আজই এলেন, আজই চল্লেন যে ! রইলেন না ? —না, সব দেখাশুনো করে গেলুম । তা ছাড়া তোর দিদি তো এখানে নেই, অনেকদিন পরে এলুম, প্রায় বছর দুই পরে, দেখাটা হোল না। আন্না কেমন এক অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে চাইলে—তারপরে এদিক ওদিক চেয়ে স্বর নিচু করে বল্পে—একটা কথা বলবো দাদাবাবু, কাউকে বলবেন না আগে বলুন ! যতীন বল্লে—না, বলছি নে । কি কথা রে আন্না ? —দিদি এখানেই আছে, কোথাও যায় নি। আপনার আসবার খবর পেয়ে চৌধুরীদের বাড়ী ওর সই-মার কাছে লুকিয়ে আছে। জ্যাঠাইমা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে আপনার কাছে এসব কথা না বলতে । যতীন বিস্মিত হয়ে বল্লে—ঠিক বলচি আন্না ! পরেই বালিকার সরল চোখের দিকে চেয়ে বুঝতে পারলে এ প্রশ্ন নিরর্থক । সে দৃষ্টিতে মিথ্যার ভঁাজ ছিল না। যতীন চলে আসচে, আন্না বল্লে—আজ থেকে গেলেন না কেন দাদাবাবু ? --না, থাকা হবে না আন্না । বাড়ীতে কাজকর্ম ফেলে এসেচি বুঝলি নে ? আন্না আবার বল্পে -দিদিকে একবার চুপি চুপি বলে আসবো যে আপনি চলে যাচ্ছেন, যদি দেখা করে ? যাবে দাদাবাবু? 纖 বালিকার স্বরে করুণ ও সহানুভূতি মাখানো । সে ছেলেমান্থৰ হলেও বুঝেছিল যতীনের প্রতি তার শ্বশুরবাড়ীর আচরণের রূঢ়ত । বিশেষ করে তার নিজের স্ত্রীর । যতীন অবিশ্বি রইল না, চনেই এল । চলে এল বটে, কিন্তু যে যতীন গিয়েছিল, সে যতীন আর আসে নি। মনভাঙা দেহটা কোনো রকমে বাড়ীতে টেনে এনেছিল মাত্র ।