পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখও २¢ আমার স্বামীর খাবারের দোকানে কাজটাই প্রবল দোষের ও নিদের কারণ হয়ে উঠল তার কাছে। আমার স্বামীকে গ্রামের লোকে নতুন জামাই বলে খাতির আদর করলে না, আমার তাতে মনে বড় দুঃখ হলো । নতুন জামাইকে সকলে নেমন্তশ্ন করে খাওয়ায়, আমার স্বামীকে সবাই যেন কেমন হেনস্থা করলে । নম্বমামা ঠিক তেমনি ভাত রাখচে। আমি তার ওখানে গিয়ে গল্প করে একটু যা আনন্দ পেতাম । এলটা জিনিস দেখলাম, নস্ব ধর্মে কর্মে মন দিয়েচে এই বয়সেই। চন্দন ঘষচে দেখে বল্লাম—দিদিমা পূজো করেন বুঝি আজকাল ? নস্থ হেসে বল্লে—ম নয়। পূজো করবো আমি। রোজ শিব গড়িয়ে পুজো করি । মানুষ হয়ে জন্মে শুধু খেয়ে যাব শুওরের মত ! আমার হাসি পেলে ওর মুখে তত্ত্বকথা শুনে। নক্ষমামা আমাকে শসা কেটে খেতে দিল, নিজেই নারিকেলের নাডু করেচে ঘরে, তা দিলে, চ খেতে দিলে । বছর দুই-তিন কাটলো। আমার স্বামীর শরীর সারলে না। ক্রমেই যেন আরও খারাপ হয়ে উঠচে। শাশুড়ী ও খুড়শাশুড়ী বলেন—ওই অলুক্ষণে বোঁ এসে বাছার শরীর একনিও ভালো গেল না । শাশুড়ী বল্লেন—সংসারের কোনো জিনিসে আট নেই তা দেখেছ লক্ষ্য করে ? কথাটা নেহাৎ মিথ্যে নয়, এ আমিও স্বীকার করুচি। সত্যিই যেন আমার কোনো জিনিসে কোনো আসক্তি নেই। ভালো কাপড় নয়, গহনা নয়—কোনো কিছুতে না । আমার স্বামী বলেন—পয়সা জমাও না কেন ? যা মাঝে মাঝে হাতে এনে দিই, জমিও । তোমার আখেরে ভালো হবে । o ওসব কথা আমি শুনেও শুনিনি কোনো দিন । কার আখেরে কি হবে সে ভেবে ফল কি । আমার একটি ছেলে হলো, কয়েক মাস পরে মারাও গেল। স্বামীর অস্থখ সারে না । সংসারে খেটেই মরি, মুখের মিষ্টি কথা কেউ বলে না। স্বামী আমায় নানারকম সাংসারিক উপদেশ দেন। তার যে রকম শরীর, কবে মরে যাবেন, তখন কি উপায় হবে ? আমি যেন কিছু কিছু হাতে রাখি। এ কথা আমি যখন শুনি তখনই মনে থাকে, তারপর আর মনে থাকে না । e সেই মাঘ মাসে আমি বাপের বাড়ী এলাম। গ্রামে এসে শুনি নক্ষমামার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েচে, সে দিন-রাত পূজো-আচ্চা নিয়ে থাকে, কারে সঙ্গে কথা বলে না, কি রকম যেন । আমি গিয়ে দেখা করলাম বিকেলের দিকে। নহমামা বল্লে—কি খবর পাঁচী, কখন এলি ? - —কাল এসেছি। ভালো আছ ? —ভাল আছি। খুব আনন্দে আছি। —সবাই তোমাকে পাগল বলচে যে ?